নীল আকাশে উড়ছে রাশি রাশি সাদা মেঘ। যে কাউকে মুগ্ধ করার মতো খুবই মনোরম এক দৃশ্য। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন এই মেঘগুলো ঠিক কত উঁচুতে? কিংবা মেঘের ধরন ও অবস্থান কোথায়?
আকাশে আমরা সাদা সাদা তুলার মতো যে বস্তু ভাসতে দেখি, তাকেই সাধারণভাবে মেঘ বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মেঘ হচ্ছে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে অগণিত হালকা হালকা জলকণার সমষ্টি।
মানুষ মেঘের বিভিন্নতা বহুকাল আগে থেকেই লক্ষ করে আসছে। মেঘের ধরন ও অবস্থান বিবেচনা করে বিভিন্ন সময় এরক ভিন্ন ভিন্ন ভাগে মেঘকে বিভক্ত করা হয়।
তবে ১৮০৩ সালে লিউক হাওয়ার্ড নামক এক ইংরেজ রসায়নবিদ মেঘের শ্রেণিবিন্যাস করতে বিশেষ তৎপর হন। আকার-আকৃতি ও চেহারা অনুসারে তিনি মেঘকে মোট ৪ ভাগে ভাগ করেন। সেগুলো হলো—
সিরাস বা অলক মেঘ,
স্ট্র্যাটাস বা স্তর মেঘ,
কিউমুলাস বা স্তূপ মেঘ এবং
নিম্বাস বা ঝঞ্ঝা মেঘ।
এছাড়াও মেঘের উচ্চতার অবস্থান অনুযায়ীও মেঘকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে—
উঁচু আকাশের মেঘ: সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ থেকে ৬০০০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করে।
মাঝারি আকাশের মেঘ: সাধারণত ২১০০ মিটার থেকে ৬০০০ মিটারের মধ্যে থাকে। এবং-
নিচু আকাশের মেঘ: নিচু আকাশের মেঘের অবস্থান সাধারণত ২১০০ মিটারের নিচে।
এদিকে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সমিতি ১৮৯৪ সালে আবার আকার এবং উচ্চতা অনুসারে মেঘকে ১০টি ভাগে বিভক্ত করে।
তারও পরবর্তী সময়ে আকাশের বুকে ২৮ প্রকারের ভেসে বেড়ানো মেঘের কথা বলা হয়।
সিলোমিটার:
মেঘের ধরন ও অবস্থান জানার কাজে সিলোমিটার যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয়। এর ব্যবহার বহু প্রাচীনকাল থেকেই আরম্ভ হয়।
কিন্তু সিলোমিটারের একটাই সমস্যা- যন্ত্রটি আলোকরশ্মি মেঘের স্তরকে ভেদ করতে পারে না। একারণে বেশি উঁচুতে থাকা মেঘগুলো সম্বন্ধে বিশেষ তথ্য বা পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব হয় না।
লেসার:
সিলোমিটারের সাহায্যে তেমন কোন সুবিধা না পাওয়ায় পরবর্তীকালে এ অবস্থার পরিবর্তন এবং উন্নতির জন্য আবিষ্কার হয় ‘লেসার’ নামক একটি যন্ত্র।
লেসার যন্ত্রের রশ্মি বিশেষভাবে সুসংবদ্ধ। এবং এটির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য একটি নির্দিষ্ট সীমার ভেতরেই থাকে। তাছাড়া লেসার রশ্মির ভেদক্ষমতা সাধারণ যেকোন কিছুর থেকে অনেক বেশি। যে কারণে ধীরে ধীরে সিলোমিটারের ব্যবহার কমে আসে।
এরপর বিজ্ঞান আরো এগিয়ে যায় এবং নতুন নতুন যন্ত্র উদ্ভাবন করে। যার ফলে রাডার অর্থ্যাৎ রেডিও ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং- এর সাহায্যে দূর আকাশে থাকা শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমানের অস্তিত্ব ভূমি নিরীক্ষণ কেন্দ্রেই ধরা পড়ে যায়।
আবার একইভাবে লেসার রশ্মির ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে লিডার (লাইট ডিটেকশন অ্যান্ড রেঞ্জিং)-এর সাহায্যে আকাশ ও এসংলগ্ন সবকিছুর উচ্চতা, দূরত্ব, তাপমাত্রা, ঘনত্ব প্রভৃতি তথ্য খুব সহজেই পাওয়া যায়।
এখানেই শেষ নয়, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কতটুকু, যা সাধারণত খালি চোখে বোঝা সম্ভব নয় তাও এই লিডারের মাধ্যমে জানা সম্ভব।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ফলে এখন কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে মেঘের ধরণ ও অবস্থান নির্ণয় থেকে শুরু করে মেঘের ছবি তুলে পৃথিবীর বিভিন্ন আবহাওয়া কেন্দ্রে পাঠানোও হচ্ছে।
আর এই প্রগতির ফলে আমরাও ঘরে বসে বেশ সহজে দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন রকম মেঘের ধরন ও অবস্থান সেই সঙ্গে এর আকারও।
এখানে মজার ব্যাপারটি হলো, আকাশ জুড়ে হরেক রকমের মেঘ থাকে তবে যেকোনো একটি মেঘকে কিন্তু আলাদাভাবে বিশেষ দেখা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটির সঙ্গে আরেকটি মেঘ বা অনেক মেঘ একত্রে মিলেমিশে আকাশে ভেসে বেড়ায়।
উঁচু আকাশের (৬০০০ মিটারের ওপরে) মেঘগুলো নিজেদের আকৃতি, চেহারা, রং ইত্যাদি সবসময় পালটাতে থাকে। এবং যে কোনো সময় নিজেকে অন্যরকম মেঘে পরিবর্তিত করে।
এ কারণে আবহাওয়াবিদরা মাঝে মাঝে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে ভীষণ জটিলতার সম্মুখীন হন।
তাই তারা মেঘের গঠন, অবস্থান ও ধরন জানার জন্য মেঘের ওপর উজ্জ্বল আলোকরশ্মি ফেলেন। মেঘের ওপর সেই প্রতিফলিত আলোক বিশ্লেষণ করে তারা আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার প্রয়াস করেন।
মেঘের এমন ধরন এবং অবস্থান দব জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় না। অন্যান্য ঋতুতেও এদের দেখতে পাওয়া যায় না। সাজেকে এমন মেঘ দেখতে পাওয়া যায়।