আমাদের শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রতিনিয়ত কাজ করতে থাকে। এগুলো সঠিকভাবে কাজ করার জন্য, অনেক বিষয়ের যত্ন নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে ব্লাড প্রেশার (Blood Pressure) নিয়ন্ত্রণ করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ ব্লাড প্রেশার বেশি হলে যেমন বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে, একই সঙ্গে আবার নিম্ন রক্তচাপ থাকলেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। কারণ রক্তচাপের সরাসরি প্রভাব হৃদয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ব্লাড প্রেশারের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সঠিক ডায়েটের পাশাপাশি সময়মতো এর পরীক্ষা করাও প্রয়োজন।
বাইরে রক্তচাপ পরীক্ষা করার জন্য প্রতিবার প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। তাই আজ আমরা আপনাদের জানাবো কিভাবে ঘরে বসেই Blood Pressure পরীক্ষা করতে পারেন। তবে তার আগে চলুন জেনে নিই ব্লাড প্রেশার সম্পর্কে কিছু তথ্য-
High Blood Pressure বা উচ্চ রক্তচাপ কি?
একটা সময় উচ্চ রক্তচাপ বয়সের উপর নির্ভর করা হয় বলে ধারণা করা হলেও এখন আর সেই কুসংস্কার নেই। খুব অল্প বয়স থেকেই মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন। এখন হাই ব্লাড প্রেশার হচ্ছে লাইফস্টাইল ডিজিজ।
অনিয়মিত জীবনধারণ, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন- মূলত এই দুটি কারণেই খুব অল্প বয়স থেকেই এখন উচ্চ রক্তচাপে ভুগা রোগীর দেখা পাওয়া যায়।
Blood Pressure কীসে মাপবেন?
ব্লাড প্রেশার মাপার ক্ষেত্রে এমনি তো ‘ট্র্যাডিশনাল’ যন্ত্র রয়েছেই।
তবে বর্তমানে নানা প্রকারর অ্যাপের আবির্ভাব হয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করে Blood Pressure মাপা কোনও কঠিন কিছুই নয়।
এই সব অ্যাপগুলোর মধ্যে কিছু কিছু তো আবার সরাসরি মনিটর থেকে রিডিং নিয়ে নেয়। একারণে লিখে রাখার মতো সমস্যায় পড়তে হয় না। তবে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিশেষজ্ঞরা ব্লাড প্রেশার মাপার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন,
হোম ব্লাড প্রেশার মনিটরিং এমনিতে খুবই লাভজনক এবং উপযোগী। তবে এটি ঘন ঘন করা কোনওমতেই উচিত নয়। এতে লাভের বদলে উল্টো ক্ষতিই হবে বেশি। এর ফলে আতঙ্ক বাড়বে, অসুস্থতা বৃদ্ধি পাবে।
ধাপে ধাপে সঠিকভাবে Blood Pressure মাপার নিয়ম
১) প্রথমে রোগীকে চেয়ারে পেছনে হেলান দিয়ে বসাতে হবে। এবং ২ হাত অবশ্যই টেবিলের উপর থাকবে। রোগীর হাত এমনভাবে রাখতে হবে যেন হাত আর হার্ট সমতলে থাকে। ঢিলা জামা কিংবা হাফ হাতা কাপড় পরা ভালো। যাতে জামার হাতা ভাজ করে উঠিয়ে রাখার সময় শরীরের ওই অংশটুকু টাইট হয়ে না যায়।
এবার Blood Pressure মাপার কাপটি কনুই থেকে ২.৫ সে.মি উপরে বাঁধুন। খুব বেশি ঢিলা বা টাইট করে বাঁধা যাবে না।
উল্লেখ্য, স্থূল ব্যক্তি ও বাচ্চাদের কাফের সাইজ ভিন্ন হয়।
২) হাত দিয়ে কনুইয়ের উপরে ব্রাকিয়াল ধমনির অবস্থান নির্ণয় করে সেখানে স্টেথোস্কোপের ডায়াফ্রাম বসাতে হবে।
খেয়াল রাখবেন, ডায়াফ্রামটি কাপড়ের উপরে বসালে ডায়াফ্রাম ও কাপড়ের ঘর্ষণে সঠিক শব্দ শুনতে অসুবিধা হয়।
৩) মিটার স্কেলটি এমনভাবে রাখতে হবে যেন তা হার্টের থাকে।
৪) অনেক সময় দেখা যায় Pressure মাপার সময় প্রকৃত সিস্টোলিক প্রেশার এবং শব্দ শুনতে পাওয়ার মাঝে একটা গ্যাপ সৃষ্টি হয়। একে বলা হয় অসকালটেটরি গ্যাপ।
এই গ্যাপ এড়ানোর জন্য সবার প্রথমে পালপেটরি মেথডে সিস্টোলিক প্রেশার দেখতে হবে।
কি ভাবে দেখবেন?
রেডিয়াল ধমনির উপরে এক হাত রেখে অন্য হাতে ব্লাডার ফোলাতে হবে। অর্থাৎ সাথে থাকা পাম্পারটি দিয়ে পাম্প করে কাফ ফোলাতে হবে যতক্ষন পর্যন্ত পালস বন্ধ হয়।
এবার কবজির (wrist joint) ২ সে.মি নিচে বৃদ্ধা আঙ্গুলের সাইডে আমরা ৩ আঙ্গুলের সাহায্যে রেডিয়াল পালস অনুভব করি। রেডিয়াল পালস হচ্ছে আমরা সচারচর হাতে যে পালস দেখে থাকি তাই। যেখানে এটি বন্ধ হবে সেটাই সিস্টোলিক।
এরপর আরও অন্তত ৩০মি.মি উপরে মিটারটি উঠাতে হবে।
তারপর ধীরে ধীরে চাপ কমাতে হবে, অর্থাৎ পাম্পার থেকে পাম্প করা বাতাস আস্তে আস্তে ছাড়তে হবে। এবং ব্রাকিয়াল ধমনীতে রক্ত চলাচল করার কারণে সৃষ্ট শব্দ Korotcoff sound শুনতে হবে, আর মিটারের দিকে গভীর মনোযোগ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে। দেখতে হবে কোথায় শব্দ শুরু হলো এবং কোথায় শেষ হলো (যদি এ্যানালগ মিটার হয় সেক্ষত্রে)।
কারণ এই শব্দ যেখানে শুরু হয় সেটা হলো সিস্টোলিক প্রেশার এবং যেখানে শব্দ শেষ হবে তাকে ডায়াস্টলিক প্রেশার বলে।