আফগানিস্তান নিয়ে নাক গলাবেন না: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

আফগানিস্তান নিয়ে নাক গলাবেন না: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
আফগানিস্তান নিয়ে নাক গলাবেন না: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

গত রোববার তালেবান যোদ্ধাদের হাতে আফগানিস্তানের পতন ঘটে। দেশটিকে ভেঙ্গে পড়া থেকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ নিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমাদের প্রতি উদ্দেশ্য করে বলেছেন ‘আফগানিস্তান নিয়ে নাক গলাবেন না।’

পশ্চিমা–সমর্থিত আশরাফ গনি সরকারের পতন এবং সেখানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশটিকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করতে এই আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।

প্রয়োজনে অবশ্যই তালেবানের সঙ্গে সামিল হবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

গত রোববার তালেবানের হাতে আফগানিস্তান সরকারের পতন ঘটার পর শুক্রবার ক্রেমলিনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সাথে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

এ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের অধিকাংশই তালেবান মুভমেন্টের নিয়ন্ত্রণে। এটাই বাস্তব, এ বাস্তবতা সকলকে মেনে নিতে হবে। এবং একে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর আফগানিস্তান রাষ্ট্র ভেঙে পড়া প্রতিরোধে নিতে হবে বিভিন্ন পদক্ষেপ।’

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানে ‘বাইরে থেকে মূল্যবোধ’ চাপিয়ে দেওয়ার মতো ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতির’ও প্রবল সমালোচনা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তিনি বলেন, ‘একটা দেশের জনগণ কী করবে, না করবে সেটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত; তাদের রাজনৈতিক জীবন কেমন হবে এর মানদণ্ড আপনারা (বাইরের শক্তি) বাহির থেকে চাপিয়ে দিতে পারেন না। ’

আফগানিস্তান থেকে ‘শরণার্থীর ছদ্মবেশে’ যাতে দেশের ‘সন্ত্রাসীরা’ প্রতিবেশী দেশগুলোয় ঢুকে যেতে না পারে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আগে থেকেই নিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও বেশ জোর দেন পুতিন।

তিনি আরও জানান, আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক অভিযানের ফলাফল কি হলো তা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার মধ্যে তাঁর দেশ রাশিয়ার কোনো লাভ নেই। বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সঙ্গে ভালো ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক স্থাপন করাটাই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া কাবুলের নতুন নেতৃত্ব স্থাপনের বিষয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে মস্কো।

যেহেতু আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া, তাই অস্থিতিশীলতা এড়াতে তালেবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টাও করে যাচ্ছে দেশটি।

আফগান সেনাদের সক্ষমতা নিয়ে ভুল ধারণা ছিল: ম্যার্কেল

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শনিবার এ কথা স্বীকার করেছেন যে, তালেবান সদস্যদের বিরুদ্ধে আফগান সেনাবাহিনীদের প্রতিরোধ সক্ষমতা নিয়ে তাঁদের মধ্যে ভুল ধারণা ছিল। এর আগের দিন রাশিয়ার মস্কো সফরকালে ম্যার্কেল আফগানিস্তান থেকে স্থানীয় সেনাদের উদ্ধারের লক্ষ্যে পুতিনের সহায়তা কামনা করেন।

ম্যার্কেল বলেন, ‘আমরা মনে করি, আফগানিস্তানে গত ২০ বছর ধরে যাঁরা আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন সবার আগে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের ওই সকল মানুষগুলোকে জার্মানিতে থাকতে দেওয়া হবে। ’

প্রসঙ্গত, রোববার কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর গত মঙ্গলবার প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন তালেবান নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মুখপাত্র ছিলেন জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।

তিনি বলেন, তাঁরা শান্তি চান। পুরোনো শত্রুদের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রতিশোধে নামবেন না। এছাড়া শরিয়া আইন অনুযায়ী আফগানিস্তান পরিচালিত হবে।

অগাস্ট মাসের মধ্যেই মার্কিনদের সরিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা: জো বাইডেন

রুশ বার্তা সংস্থা তাস এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি অগাস্টের মধ্যেই মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

মার্কিন জনপ্রিয় সম্প্রচার মাধ্যম সিবিএসকে এ ব্যাপারে জানিয়ে সুলিভান বলেন, আফগানিস্তান ছাড়ায় আগ্রহী মার্কিন সৈন্যদের দেশটি থেকে ফেরত আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর প্রত্যাশা, ৩১ অগাস্টের মধ্যেই সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

আরো পড়ুন:
আফগানিস্তান ইস্যুতে জো বাইডেনের ভাষণে যা যা বলা হলো 
দশকের পর দশক ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ কেন চলছে?

আর শুক্রবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে জো বাইডেন মন্তব্য করেন যে, কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। উড়োজাহাজে করে এত মানুষকে যেভাবে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। তবে দেশটি থেকে মার্কিনদের সরিয়ে নেওয়াকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আবার যে ৫০-৬৫ হাজার আফগানী দেশ ছাড়তে চান, তাঁদেরও একই পদ্ধতিতেই সরিয়ে নেওয়া হবে।

প্রয়োজনে অবশ্যই তালেবানের সঙ্গে কাজ করব: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে যুক্তরাজ্য অবশ্যই তালেবানের সাথে সামিল হবে। তাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করবে।

শুক্রবার লন্ডনে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ চলাকালে তিনি এ বক্তব্য পেশ করেন।

বরিস জনসন আরও বলেন, ‘আমি মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই। আফগানিস্তানের জন্য একটি উপযুক্ত সমাধান বের করতে আমাদের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা থাকবে।

প্রয়োজন হলে আমরা অবশ্যই তালেবানের সঙ্গেও একত্রে কাজ করব।’ এর পূর্বে ব্রিটিশ নেতা মন্তব্য করেছিলেন ‘তালেবানের মূল্যায়ন কথায় নয়, তাদের কাজে করা হবে’।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন