রংধনু কীভাবে হয়? কেন রংধনুতে সাতটি রঙই দেখায়? 

রংধনু কীভাবে হয়? কেন রংধনুতে সাতটি রঙই হয়? 
রংধনু কীভাবে হয়? কেন রংধনুতে সাতটি রঙই হয়? 

রংধনু মানেই নয়নাভিরাম এক দৃশ্য। ছোট থেকে বড় সকলেই একে দেখে বেশ আগ্রহ সহকারে। এক পশলা বৃষ্টির পর আমরা যখন বাইরে বের হই তখন মাঝেমধ্যেই আকাশে রংধনু দেখতে পাই।

বৃষ্টির পর আকাশে হঠাৎ করে দেখা যায় অর্ধবৃত্তাকার অবস্থায় রংধনুর সাতটি রং প্রকাশ পায়। কিন্তু কেন?

এই রংধনু দেখে আমাদের সকলের মনেই প্রধান যে কয়েকটি প্রশ্ন জাগে, সেগুলো হচ্ছে- কেন এই রংধনু উঠেছে? কেন সবসময় এর সাতটি রঙই হতে হবে? কেন এটি অর্ধবৃত্তাকার?

আজকে আমরা রংধনু সম্পর্কে এই প্রশ্নগুলো খুঁজে বের করবো।

রংধনু কেন হয়?

ঘটনার শুরু হয় আলোর প্রতিসরণ থেকে। আলো যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমের ‍দিকে যায়, তখন তা কিছুটা বেকে যায়।

বৃষ্টির সময় বা বৃষ্টির পরেও পানির কণা বাতাসে ভেসে থাকে। তখন সূর্যের আলো এই পানির কণাগুলোর ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় তা প্রতিসরিত হয়ে বেকে যায়।

আলোকরশ্মি যখন প্রতিসরিত হয় তখন তা সাতটি রঙে বিভক্ত হয়ে যায়।

প্রকৃতপক্ষে আলোর রং সাদা। কিন্তু এই সাদা আবার সাতটি মৌলিক রঙের মিশ্রণ।

তাই যখন আলোকরশ্মি পানির ফোটায় প্রতিসরিত হয়ে যায় তখন তা সাতটি রঙে বিভক্ত হয়ে যায়।

এবারের প্রশ্নটি হলো-

সাতটি রং কেন আমরা দেখি? এবং কেন এটি একই লাইনেই বারবার দেখি?

ব্যাপারটা অনেকটা এরকম- প্রত্যেকটি রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য প্রত্যেকটি রং থেকে ভিন্ন। তাই যখন আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে যায় তখন লাল রঙের প্রতিসরিত কোণের মান হয় ৪২°।

আবার বেগুণী রঙের প্রতিসরিত কোণের মান হয় ৪০°।

আলোর যে রশ্মিটি আমাদের চোখে ৪২° কোণে এসে পড়বে তা আমরা লাল রং হিসেবে দেখতে পাই। লাল রঙের আলো সবচেয়ে কম বাকে। এবং সবচেয়ে দ্রুত পৌছে।

আর যেহেতু বেগুণী রঙের ক্ষেত্রে এটি ৪০° ’তেই হয় তাই এই রং সবচেয়ে বেশি বাকে।

যেভাবে সৃষ্টি হয় রংধনু
যেভাবে সৃষ্টি হয় রংধনু

বাকি ৫টি প্রতিসরিত কোণের মান এই ৪২° এবং ৪০° এর মধ্যেই পড়ে যায়।

যার ফলে বৃষ্টির পরে অথবা বৃষ্টির সময় আমাদের চোখের সামনে এই সাতটি রঙের রংধনু ভাসমান হয়।

শুধুমাত্র বৃষ্টি হলেই কি রংধনু হবে?

হ্যা, শুধুমাত্র বৃষ্টি হলেই রংধনু হবে। তবে বৃষ্টি হওয়ার সময় সূর্যের আলোর উপস্থিত থাকা লাগবে।

সূর্যের আলো যদি পানির কণায় প্রতিসরিত না হতে পারে তবে রংধনু উৎপন্ন হবে না।

রংধনু কি একইসাথে সবাই দেখতে পায়?

উত্তর না। রংধনু দেখার জন্য আমাদের সূর্যের সাপেক্ষে একটি সঠিক কোণ উৎপন্ন করতে হবে। যদি সেই সঠিক অবস্থানে আমরা না দাঁড়াতে পারি তাহলে আমরা রংধনু দেখতে পারবো না।

একটি মজার ব্যাপার হলো দুটি মানুষ একসঙ্গে দাড়ালেও একইসাথে তারা রংধনু দেখতে পায় না। কারণ দুটি মানুষের চোখের অবস্থান কিন্তু ভিন্ন হয়ে থাকে।

তাই দুটি চোখের ভিন্ন ভিন্ন কোণ উৎপন্ন হবে। এজন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন রংধনু দেখবে। কিন্তু রংধনুর রং সবসময় একই বলে তারা তা আলাদা করতে পারবে না।

এজন্যই আমাদের মনে হয় আমরা একই রংধনু দেখছি। বস্তুত আমাদের প্রত্যেকের জন্যেই তা আলাদা।

রংধনু সবসময় অর্ধবৃত্তাকার আকৃতিতে উঠে কেন?

আসলে রংধনু অর্ধবৃত্তাকার নয়। রংধনু মূলত পূর্ণ বৃত্তাকার।

রংধনু আমাদের দৃষ্টিক্ষমতার ৪০°-৪২° কোণে তৈরি হয়।

কিন্তু পৃথিবী সমতল। তাই আমরা পূর্ণ বৃত্তাকার আকৃতি দেখতে পাই না। অর্ধবৃত্তাকার রূপেই দেখি।

রংধনুর সম্পূর্ণ বৃ্ত্তাকার রূপ দেখতে হলে আমাদের উপরে উঠতে হবে।

এজন্যই বিমান থেকে পূর্ণ বৃত্তাকার রংধনু দেখা যায়।

দুপুর বেলা রংধনু দেখা যায় না কেন?

একটা জিনিস কি কখনো খেয়াল করেছেন? রংধনু কিন্তু কখনো দুপুরে দেখা যায় না। হয় সকালে না হয় বিকালে একে দেতে পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন:
অপরূপ সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান রং এর আদ্যোপান্ত
মশা কেন রক্ত পান করে? কারন জেনে অবাক হবেন আপনিও! 
স্পেস পেন বা মহাকাশে ব্যবহারিত কলম সম্পর্কে আমরা কি জানি ?

এর কারণে হচ্ছে রংধনু তৈরি হওয়ার জন্য আলোকে ৪২° হিসাবে বৃষ্টির ফোটাকে ভেদ করে আসতে হয়। যা দুপুর বেলা সম্ভব নয়।

আকাশে রংধনু সৃষ্টি হওয়ার জন্যে সুর্যকে আকাশের পুর্ব অথবা পশ্চিম ভাগে হেলে থাকতে হয়। আর সুর্য দুপুরে ঠিক আমাদের মাথা বরাবর অবস্থান করে।

একারণে কোন কোণ তৈরি হতে পারে না। আর আমরাও রংধনু দেখতে পারি না।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন