পৃথিবীতে যতগুলো প্রাণী রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম সুন্দর প্রাণী হলো পান্ডা। বাচ্চাসুলভ আচরণের এই প্রাণীটি বৃদ্ধ থেকে ছোট বাচ্চা সকলের মনই ইতোমধ্যে জয় করে ফেলেছে।
আজ আমরা জানতে চলেছে পান্ডার জীবন সম্পর্কে নানারকম তথ্য।
পান্ডা দেখতে অনেকটা ভালুকের মতো। ভালুকের মতোই বড়সড় এক প্রজাতির প্রাণী এরা।
নামকরণ:
প্রাণীটি সব জায়গাতেই পান্ডা নামেই পরিচিত। ইংরেজিতে Panda.
বৈজ্ঞানিক নাম:
এই প্রাণীটির বৈজ্ঞানিক নাম Ailuropoda melanoleuca. যার অর্থ “সাদাকালো বিড়ালপদী” প্রাণী।
পরিবার:
পান্ডা কর্ডাটা পর্বের অন্তর্ভুক্ত Ursidae পরিবারের অন্তর্গত তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী।
আবাস্থল:
দক্ষিণ-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য চীনের পাহাড়ি ঢালের ঘন বাঁশবনে পান্ডাদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।
আকার-আকৃতি:
একটি প্রাপ্ত বয়স্ক পান্ডার আকার ৬০ সেমি. থেকে ৭৫ সেমি, পর্যন্ত হয়ে থাকে। লম্বায় এরা ৪-৫ ফুট হয়ে থাকে।
এবং একেকটি পান্ডার ওজন ৭০ কেজি এমনকি ১০০ কেজি পর্যন্তও হতে দেখা যায়।
গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
পান্ডার মতো এরকম বৈচিত্র্যময়তার স্তন্যপায়ী প্রাণী পৃথিবীতে সম্ভবত দ্বিতীয়টি নেই। এদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনচরিত বেশ আলাদা।
এরা মানুষের মতোই দুই পায়ে ভড় দিয়ে হাটতে পারে। আবার গাছেও চড়তে পারে।
পান্ডার গায়ের রঙ সাদা এবং কালো। সাদাকালো বড়-ছোট লোমে সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা থাকে এদের।
পান্ডাদের শরীরের স্বতন্ত্র এই সাদা-কালো প্যাটার্ন তাদের অন্য সকল প্রাণীদের থেকেও আলাদা হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।
পান্ডার মুখমণ্ডল, ঘাড়, পেট এবং পিঠের অংশগুলো সাদা। যা এদেরকে তুষারের মধ্যে গা ঢাকা দিতে সাহায্য করে।
আর কালো রঙের হাত-পায়ের সাহায্যে প্রাণীটি ছায়াচ্ছন্ন স্থানেও নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারে।
তবে সাদা-কালো রং যে শুধুই এরা নিজেদের লুকোনোর কাজে লাগায়, তা নয়।
গবেষকদের অনুমান, ভালুকদের কালো কান এবং চোখের ওপরের আবরণ যেমন এদের হিংস্রতা এবং আগ্রাসী আচরণের সংকেত দেয়। আর তা দেখে সম্ভাব্য শিকারি ও প্রতিযোগী প্রাণীরা সতর্ক হয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।
ঠিক তেমনি পান্ডাদের ক্ষেত্রেও এ রকম কোনো ব্যাপার হতে পারে।
পান্ডারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য এবং শিকারিকে ভয় দেখানোর জন্য তাদের চেহারায় এসব বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে।
আবার এদের অন্যতম আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা নিজেদের অস্তিত্ব চিনে নেয় তাদের শরীরের গন্ধের মাধ্যমে। কারণ পান্ডাগুলোর একেকটির শরীরের গন্ধ একেকরকম। যে কারণে তারা সহজেই নিজেদের আলাদা কিংবা শনাক্ত করতে পারে।
পান্ডাদের জন্মই যেন হয়েছে বাঁশ পাতা খাবার মতো উপযুক্ত হয়ে। বাঁশের কঞ্চি ঠিকভাবে ধরার জন্য জায়ান্ট পান্ডার ৫ টি সাধারণ আঙুল ছাড়াও হাতের তালু এবং কব্জির সংযোগস্থলে আরও একটি বুড়ো-আঙুলের মতন অংশ দেখা যায়।
এদের মুখের চোয়াল অনেক বড়।
এরা যে শ্বাপদ এবং শুধুমাত্র বাঁশ পাতা খাওয়ার জন্য যে পুরোপুরি বিবর্তিত নয় তাই এদের রয়েছে কেবল একটি ছোট ক্ষুদ্রান্ত্র।
পান্ডারা খুবই অলস প্রকৃতির এবং ঘুম কাতুরে। প্রতিদিন এদের গড় ঘুমের পরিমাণ প্রায় ১৬ ঘন্টা।
খাদ্যাভ্যাস:
এদের খাদ্যাভ্যাস অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় বেশ আলাদা।
পান্ডারা তাদের জীবনের বেশিরভাগ অংশই পার করে বাঁশপাতা খেয়ে। এটা এদের পছন্দনীয় এবং প্রধান খাবার।
এরা শ্বাপদকূলের অন্তর্গত হওয়া সত্ত্বেও খাবারের ৯৯% জুড়েই রয়েছে বাঁশ পাতা।
পান্ডাদের কেবল একটি ছোট ক্ষুদ্রান্ত্র রয়েছে। একারণে এই প্রাণীদের খুব বেশি পরিমাণে খাবার খেতে হয়।
জীবনধারণের জন্য একটা পূর্ণবয়স্ক পান্ডাকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫-৩৮ কেজি বাঁশপাতা খেতে হয়।
বাসস্থান:
বনে জঙ্গলেই এরা বাস করে। তবে যেখানে বাঁশবাগান বা ঝোপ-ঝাড় রয়েছে সেসব এলাকায় পান্ডাদের আনাগোনা বেশি।
বংশবিস্তার:
পান্ডারা বছরে একবারই বাচ্চা প্রসব করে। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যবর্তী সময় এদের প্রজনন কাল।
একবারে একটি পান্ডা দুটো করে বাচ্চা জন্ম দেয়। জন্মের সময় বাচ্চা পান্ডার ওজন থাকে ৯০ থেকে ১৩০ গ্রাম!
আরো পড়ুন: কৌতুকপূর্ণ মজার প্রাণী – বানর রঙ্গের জাদুকর বহুরূপী প্রাণী – গিরগিটি সাগরতলের হিংস্র প্রাণী – হাঙ্গর মাছ
লেখাটি পড়ে অনেক ভাল লাগল। পান্ডা সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারলাম। এজন্য ধন্যবাদ।