টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বনিন্ম রান অস্ট্রেলিয়ার

টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বনিন্ম রান অস্ট্রেলিয়ার
টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বনিন্ম রান অস্ট্রেলিয়ার

শেষ রানে বাংলাদেশের বিপক্ষে টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বনিম্ন রান অস্ট্রেলিয়ার। এ যেন এক লজ্জার রেকর্ড গড়ে তোলে অস্ট্রেলিয়া।

শেষ সিরিজে বাড়ি ফেরার তাড়াটা যেন দুই দলেরই একটু বেশি ছিল। হবে নাই বা কেন? দীর্ঘদিন বাড়িছাড়া তারা।

‘সাকিব ভাই তাড়াতাড়ি আউট করেন, অনেক দিন পর বাসায় যাব’- স্ট্যাম্প মাইক্রোফোনে ভেসে এল কথাটা। উইকেটকিপার নুরুল হাসান উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলছিলেন সাকিব আল হাসানকে উদ্দেশ্য করে।

সত্যিই, বাড়ি ফেরার তাড়ায় আর যেন তর সইছে না; সেই জিম্বাবুয়ে সফর থেকে শুরু করে বাড়ির বাইরে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। মাঝে চলে গেছে গোটা একটি ঈদ। পরিবার-পরিজনের ভালোবাসার ছোঁয়া পান না কত্ত দিন!

মাঠে তখন অস্ট্রেলিয়া কাঁপছে। চলছিল ব্যাটসম্যানদের যাওয়া আর আসা। অনেক দিন পর বাসায় যাবে, নুরুল হাসানের কণ্ঠে তাই তাড়াতাড়ি ম্যাচ শেষ করার আকুতি।

যদিও সাইফউদ্দিন আগেই কাজের অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিলেন। নুরুলের কথা রাখতে তাই সাকিব বাকি কাজটাও করে দিলেন।

বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়াকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বনিম্ন রানে অলআউটের লজ্জা দিয়ে ৬০ রানে জয় অর্জন করলো বাংলাদেশ। ৫ ম্যাচের সিরিজটা নিজেদের দখলে করে নিল ৪-১ ব্যবধানে।

অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেও কী বাড়ি ফেরার তাড়াটা যেন একটু বেশিই দেখা গেল!

ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এই দিন তেমন ভালো করতে পারেনি। ১২২ রানেই থেমে গেছে ইনিংস।

এর জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে খোদ অস্ট্রেলীয়রাও নিজেদের শেষটায় অতোটা ভালো করতে পারল না।

৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর নিয়মিত বিরতিতেই পড়েছে তাদের উইকেট। ৩ উইকেটে ৪৮ করার পরে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ৭ উইকেট  পড়েছে ১৪ রানে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে তারা শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে ৮ রানে।

টি-টোয়েন্টির শেষ ম্যাচ খেলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকেই অস্ট্রেলীয় দলের সরাসরি বিমানবন্দর যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ভাড়া করা উড়োজাহাজে চেপে সোজা দেশের মাটিতে।

বাংলাদেশ সফরে আসার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল তাদের। তাই তারাও অনেক দিন ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে রয়েছে।

কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে এমন তাড়াহুড়া নিশ্চয়ই অস্ট্রেলীয় দলের জন্য কাম্য ছিল না।

অস্ট্রেলীয়ান পত্র-পত্রিকা এ সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারের পরই বলে দিয়েছিল সেই হারে নাকি সর্বকালের ‘তলানি’তে দল তারা।

এখন শেষ ম্যাচে ৬২শে রানে গুটিয়ে টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড গড়ার পর নিশ্চয়ই নিজেদের জন্য নতুন কোনো বিশেষণ খুঁজে নেবেন তারা।

সফরে অস্ট্রেলিয়া দলের একমাত্র জয়ের মশাল ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে আজ ওপেন করতেই পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফিরলেন ৩ রান তুলেই।

বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকেনি আরেক ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান মিচেল মার্শের ইনিংস। নাসুমের আর্ম বলে আউট হয়ে যান তিনিও।

নাসুম খেলার শুরুতেই ২ ওভারে এ ২ উইকেট তুলে নিয়ে বড় ধাক্কা দেন অস্ট্রেলিয়াকে।

তারপরেও রান আসছিল। নতুন বলের গতি ব্যবহার করে এদিক-সেদিক থেকে বেশকিছু রান পাচ্ছিল ম্যাথু ওয়েড, বেন ম্যাকডারমটরা।

কিন্তু বল যতই পুরোনো হতে শুরু করলো, রান করা যেন ততই কঠিন হয়ে উঠল।

অতঃপর, অধিনায়কের সঙ্গে ম্যাকডারমটের ২২ রানের জুটি ভাঙতে না ভাঙতেই ধস নামে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে।

মাত্র ১৩.৪ ওভারের মধ্যে অলআউট হওয়ার মতো ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে বিরল।

আরো পড়ুন:
টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টাইগারদের রেকর্ড জয় 
টানা ৩ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

আর এই ধসের আরম্ভটা হয় সাকিব ও দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের হাত ধরে। মাঝের ওভারে ২ জন একত্রে চোখের পলকে ৭ উইকেট তুলে নেন।

সাকিব আল হাসান ৩.৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। ৩ ওভার ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন সাইফউদ্দিন।

আর নাসুম শুরুটা করে দিয়েছিলেন, মাহমুদউল্লাহও তাঁর অফ ব্রেকে নিয়ে নেন ১ উইকেট।

হলফ করে বলাই যায়, সর্বনিন্ম রান অস্ট্রেলিয়ার এই সফরটা খুব দ্রুতই ভুলে যেতে চাইবে। কিন্তু জলন্ত আগুনের মতো এটি তাদের মনে থাকবে অনেক দিন!

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন