হিমশীতল আবহাওয়ার সীল মাছ যদিও আমাদের দেশে দেখা যায় না, তবে এর পরিচিতি বিশ্বব্যপী। দুনিয়ার এমন কোন প্রান্ত নেই যেখানে মানুষ এই সামুদ্রিক প্রাণীকে চিনে না।
আজ আমরা জানতে চলেছি সীল মাছ সম্পর্কে জানা-অজানা নানা তথ্য।
নাম:
ইংরেজীতে সী-লায়ন Sea Lion। সিল মাছ বা সীল মাছ বলা হয় বিভিন্ন দেশে।
সীল মাছের ল্যাটিন নাম ওটারিডি।
বৈজ্ঞানিক নাম:
সীল মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Zalophus californianus.
পরিবার:
সীল মাছ পিনপিডিয়া পরিবারের অন্তর্গত একপ্রকার স্তন্যপ্রায়ী, মেরুদন্ডী জলজ প্রাণী।
প্রজাতি:
বিশ্বব্যাপী ৩০ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির সীল মাছ রয়েছে।
এদের মধ্যে কিছু হলো-
হার্বার সীল
গ্রে সীল
গ্রে সীল
হাওয়াইয়ান সীল
ক্রেস্ট সিল
রিংড সিল
ক্যাস্পিয়ান সিল
আবাস্থল:
উপকূলীয় জল এবং পাথুরে স্থানের তীরে এরা বসবাস করে থাকে।
প্রাপ্তিস্থান:
সাগর-মহাসাগরে সীল মাছেদের বিস্তৃতি।
আকার-আকৃতি:
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সীল মাছ নারী মাছদের তুলনায় আকারে বড় হয়ে থাকে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সীল মাছ স্ত্রী মাছদের চেয়ে ১.৫-৫ গুণ বড় হয়ে থাকে।
আকারে পুরুষ সীল মাছ ২.৫ মিটার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সে তুলনায় মহিলা সীল মাছের দৈহিক দৈর্ঘ্য মাত্র ১ মিটার।
ওজন:
একেকটি সীল মাছের ওজন প্রায় ১০৫-২০০০ কেজি বা ২৩০-৬০০০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
সীল মাছ খুবই শান্ত প্রকৃতির প্রাণী। এরা দলবদ্ধভাবে জীবনযাপন করে থাকে।
আকারে বিরাট বিধায় এর তেমন কোন শত্রুও নেই।
শুধুমাত্র তখনই এই প্রাণী হিংস্র হয়ে ওঠে যখন তাদের বাচ্চাদের কেও বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।
এরা সবসময় পানিতে ভেসে বেড়ায়, তীরে চলাফেরা করে, এবং শিকারের খোঁজ করে।
বাদামী, কালো, সাদা ধূসর রঙের শরীর হয়ে থাকে এদের। চামড়ায় কোন আঁইশ থাকে না। বরং ত্বক মসৃণ হয়ে থাকে। তবে শরীরের কিছু কিছু জায়গায় ছোট পশম রয়েছে।
সীলের শরীর সরু, প্রসারিত প্রকৃতির। এদের একটি ছোট লেজও রয়েছে। সাধারণত মাছেদের লেজ দেখতে যেমন হয়ে থাকে। এবং একটি দীর্ঘ পেশীযুক্ত ঘাড় রয়েছে।
সীল মাছ দলবদ্ধভাবে সমুদ্র উপকূলে বিচরণ করে
সীল মাছের মাথা বা খুলি কিছুটা ভালুকের খুলির মতো দেখতে। মুখের বৃত্তাকার আকৃতিটি কিছুটা দীর্ঘায়িত।
সীলমাছের দুটি ছোট কান রয়েছে যা মাথার সঙ্গেই অবস্থিত।
এদের চোয়ালে ৩৪ টি তীক্ষ্ণ দাঁত রয়েছে। সীল মাছও মানুষের মতো দুধের দাঁতযুক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে। এবং জন্মের কয়েক মাস পরেই মূল দাঁত প্রতিস্থাপন হয়।
এদের দুটি ছোট পাখনা রয়েছে।
এদের গতি ঘন্টায় প্রায় ২৭ মাইল।
খাদ্যাভ্যাস:
সীল মাছ জলজ প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। সমুদ্রের প্রাণী শিকার করা এদের পছন্দনীয় কাজ গুলোর মধ্যে একটি।
শিকারের জন্য এই প্রাণী পানিতে সাঁতরে বেড়ায়। এবং মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ধরে।
সাধারণত এরা কাকড়া, স্কুইড ও অন্যান্য ছোট-খাটো জলজ প্রাণী শিকার করে থাকে।
আবার প্রয়োজনে এরা স্থল থেকেও শিকার করে। একটি সীল খুব সূক্ষ্মভাবে সমুদ্রের তীরে বালির মধ্যে লুকিয়ে থাকা মাছ বা যেকোন প্রাণীর শ্বাস অনুভব করতে পারে।
এটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বালুর নীচে লুকিয়ে থাকা প্রাণীটকে খুঁজে পেতে সীল মাছের কেবল কয়েক সেকেন্ডই যথেষ্ট।
সীল মাঝ বিশালাকৃতির, একারণে এ জাতীয় প্রাণীর প্রচুর খাদ্য প্রয়োজন। তাই সীল মাছ তার জীবনের বেশিরভাগ সময় খাবার অনুসন্ধানে ব্যয় করে থাকে।
বাসস্থান:
সীল মাছ সাধারণত ঠান্ডা আবহাওয়া, জল এবং স্থান পছন্দ করে। তাই বরফশীতল সমুদ্রে এদের বেশি দেখা যায়।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে, প্রশান্ত মহাসাগরে সীল মাছ প্রাকৃতিকভাবে বাস করে। এবং দক্ষিণে- আটলান্টিক মহাসাগরে, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে, তার পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলেও সীল মাছের দেখা পাওয়া যায়।
কিছু কিছু প্রজাতি আবার আর্টিক মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের সংলগ্ন অববাহিকায় বাস করে।
এছাড়াও সম্পূর্ণ বিশ্বে মিঠা পানির ৩ প্রজাতির সীল মাছ রয়েছে। এদের মধ্যে ২টি প্রজাতি রাশিয়ার ভূখন্ডে বাস করে।
বিশেজ্ঞদের ধারণা, সীল মাছ মূলত হিমশীতল পরিবেশেরই প্রাণী।
কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সমুদ্রস্তরের বরফ গলতে শুরু করায় এরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে।
এবং জীবনধারণের জন্য মিঠা পানির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
বংশবৃদ্ধি:
প্রজনন মৌসুমে সীলেরা উপকূলে যায়। তবে তার আগে পুরুষ সীল মাছেরা একটি বিশেষ অঞ্চল ভাগ করে দেয় এবং অপরিচিতদের থেকে জায়গাটিকে রক্ষা করে।
পরে এই স্থানে স্ত্রী সীল মাছ প্রবেশ করে। এই বিভক্ত অংশে সর্বমোট ৩-৪০ জন স্ত্রী সীল মাছ থাকতে পারে।
যৌন প্রজননের মাধ্যমে এরা বংশবৃদ্ধি করে থাকে। একেকটি সীল মাছের গর্ভধারণকাল অনেক লম্বা হয়ে থাকে যা পুরো বছরও স্থির হয়।
একবারে একটি সীল মাছ সাধারণত ১টি, ক্ষেত্র বিশেষে ২টি সন্তানও প্রসব করে থাকে।