বর্ষাকালের এই সময় কখনো প্রবল বেগে বৃষ্টি তো আবার কখনো খটখটা রোদ। পরিবেশের এমন ঘন ঘন পরিবর্তনের ফলে হাঁচি, কাশি, এলার্জিজনিত সমস্যা ইত্যাদি রোগ ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে।
এলার্জিজনিত সমস্যা কেন হয়? এর কারণ কী? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সাক্ষাৎকার করা হয়েছে বারডেম হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের বিভাগীয়প্রধান ডাক্তার রেজা বিন জায়েদ এর সঙ্গে।
এই সময়ে হাঁচি, কাশি, এলার্জিজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণ কি ?
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ষাকালে চারদিকে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংখ্যা বেড়ে যায়। মেঘলা আবহাওয়া থাকায় পরিবেশ থাকে ঠান্ডা এবং স্যাঁতস্যাঁতে। আর তাই বর্ষাকালে রোগবালাই বেশি হয়ে থাকে।
এছাড়াও এই সময়ে বৃষ্টিতে বেশি ভিজে যাওয়া এবং গুমট আবহাওয়ার কারণে ত্বকে ঘাম, অ্যালার্জি, ঘামাচির মতো কিছু সাধারণ সমস্যা দেখা দেয়। যেকারণে হাঁচি-কাশির প্রকোপও বেশি বেড়ে যায়।
এই সময় এলার্জি হওয়ার বিভিন্ন উপাদান আমাদের শ্বাসনালীর ভেতর ঢুকে যায়। কিংবা আমাদের ত্বকের উপর বসে পরে। এলার্জেন হচ্ছে তাদের মধ্যে একটি।
হাঁচি, কাশির সঙ্গে এলার্জির কি সম্পর্ক? ত্বকে বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে এলার্জিজনিতসমস্যাগুলোকীভাবে প্রকাশ পায়?
এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাঁচি-কাশি আসলে উপসর্গ মাত্র। এগুলো সবই এলার্জি সংক্রান্ত রোগ।
তবে সব হাঁচিই যে এলার্জি সংক্রান্ত তা কিন্তু নয়। এ সময় ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে হাঁচি হতে পারে।
একটু বৃষ্টিতে ভিজলেও নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে এবং কাশি হতে পারে।
আবার অনেকের ত্বকে অযথাই চুলকানি আরম্ভ হয়। সবকিছুর উৎস কিন্তু একই, শুধুমাত্র উপসর্গ ভিন্ন।
এলার্জি যখন নাকে পৌছায়, তখন নাকের ঝিল্লির ওপর বসে তার প্রতিক্রিয়া শুরু করে। এবং তখনই হাঁচি শুরু হয়।
আবার নাক থেকে যখন গলায় যায় তখন কাশি হয়।
আর যখন ত্বকে এলার্জি হয় তখন এটি চুলকানি আকারে প্রকাশ হয়।
এলার্জেন কোন কোন ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে? সবার ক্ষেত্রে তো একই রকম উপসর্গদেখাযায় না। তাহলেএটা কীভাবে বোঝা যাবে?
অতিসংবেদনশীলতা এলার্জিজনিত সমস্যার মূল কারণ। তবে সবার ক্ষেত্রে একরকম নয়। ব্যক্তি বিশেষে এটি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
কিন্তু এলার্জিজনিত সমস্যাগুলো যে কেবল এই সংবেদনশীলতার ওপর নির্ভর করে- তা নয়।
এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে। যেমন: যেকোন পরিস্থিতে আবহাওয়ায় ঠিক কতটা পরিমাণ এলার্জির উপাদানগুলো ছড়িয়ে রয়েছে তার ওপরও এই সমস্যা অনেকটা নির্ভর করে।
আবহাওয়ায় এলার্জির উপাদানগুলোর পরিমাণ যত বৃদ্ধি পেতে থাকে এই রোগের প্রকোপও ততই বাড়তে থাকে।
যেকারণে একটি শহরে দূষণ যত বেশি হয় মানুষ তত এলার্জির সমস্যায় ভুগে।
তাছাড়া আমরা রোজ খাই এমন অনেক খাদ্যের উপাদানের মধ্যেও এলার্জেন রয়েছে।
কিছু কিছু খাদ্যের উপাদানই এই এলার্জির জন্য দায়ী। তবে এটিও ব্যক্তি ভেদে আলাদা হয়ে থাকে।
একেকজন মানুষের এলার্জি একেক খাবার খাওয়ার ফলে হয়।
এলার্জিজনিত কারণে ত্বকের কোনরকম সমস্যা হলে তা বোঝার উপায় কী?
ডাক্তার জায়েদ বলেন, এলার্জির কারণে যদি ত্বকের সমস্যা হয় তাহলে হঠাৎ করে ত্বক লাল লাল চাকার মতো ফুলে উঠে। একইসঙ্গে অতিরিক্ত চুলকানি হয়।
এলার্জি অনেক জায়গায় একত্রেও হতে পারে আবার নিদির্ষ্ট কোন জায়গায়ও হতে পারে।
তবে এই সমস্যাগুলো খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টার ভেতরেই এই সমস্যা চলে যায়।
তবে ২৪ ঘণ্টার পর আবার ফিরে আসে এবং ভিন্ন কোন জায়গায় চুলকানি হয়।
এলার্জির কারণে যদি বেশি কাশি হয় তবে গলা বসে যেতে পারে। এমনকি কাশতে কাশতে অনেক সময় ফেরিনজাইটিস হতে দেখা যায়। ফেরিনজাইটিস হলে গলায় ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়।
কোন ধরনের খাবার থেকেএলার্জিরসমস্যা হয়?
অনেকেই ভাবে খাবারের এলার্জি কেবল নির্দিষ্ট খাবার থেকেই হয়।
প্রচলিত ধারণা থেকে সাধারণত ভাবা হয়- ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, বেগুন এসব খাবার খেলে এলার্জি হয়। কিন্তু এগুলো সঠিক নয়, এক ধরণের ভ্রান্ত ধারণা।
ব্যক্তি বিশেষে নিদির্ষ্ট একটি খাবারে হয়তো এলার্জির প্রকোপ থাকতে পারে। তবে এতগুলো উপাদানের ফলে সাধারণত একটি মাত্র মানুষের এলার্জিজনিত সমস্যা হয় না।
ডাক্তার জায়েদ বলেন, ইলিশ মাছ সরাসরি এলার্জি হওয়ার জন্য দায়ী নয়।
কিন্তু চিংড়ি মাছের কারণে এলার্জি হতেও পারে। খোসা জাতীয় যেসব মাছ রয়েছে যেটাকে ইংরেজিতে শেল ফিস বলে এসবের মাধ্যমে এলার্জির সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অনেকের দুধে এলার্জি থাকে, বিশেষ করে গরুর দুধে। গরুকে কোনো কারণে চিকিৎসা দেওয়া হলে এরপর যে দুধ পাওয়া যায় সেখান থেকে এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া লাল জাতীয় সবজি যেমন : গাজর, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো- খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের রঙিন সবজিগুলোয় এলার্জির সমস্যা থাকে।
তাই ব্যক্তি বিশেষে প্রত্যেককে কোন কোন খাবারে এলার্জিজনিত সমস্যা হচ্ছে সেটি জানতে হবে। এবং সেভাবেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তার পরামর্শ মতো চলতে হবে।