আজকের বিশ্বের আধুনিক সভ্যতা বিদ্যুৎ ছাড়া কল্পনা করা অসম্ভব। আজ গতানুগতিক বিশ্বে বিদ্যুৎ ব্যতীত আমাদের বাড়ি-ঘর, অফিস আদালত কোন কিছুই কল্পনা করা যায় না।
বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরোপুরি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। তাই শুধু গত সহস্র বছরেই নয়, বিদ্যুৎ নিঃসন্দেহে ইতিহাসের সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার।
কারণ বিদ্যুতের উপর নির্ভর করে যেসব যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় তার সবকটিই ইতিহাসের অন্যতম সেরা আবিষ্কার বলে বিবেচিত।
বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ধারণা:
বিদ্যুৎ আবিষ্কারের প্রচেষ্টার শুরু কেবল সতেরশ কিংবা আঠারশ সাল থেকেই নয়। এর আরও অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে এনিয়ে নানা গবেষণা কার্যক্রম হয়েছে।
জানা যায় ৬০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণার ফসল আজকের এই উৎপাদনশীল বিদ্যুৎ।
সতেরশ শতাব্দিতে বিদ্যুৎ নিয়ে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করা হয়। এসকল এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে এমন অনেক কিছু আবিষ্কার করা হয় যার মধ্যে ইলেট্রিক জেনারেটর, পজেটিভ-নেগেটিভ কারেন্ট, কন্ডাক্টর, ইন্সিলেটর ইত্যাদি ছিল।
১৯৩০ সালে হওয়া আর্কেলজিকাল গবেষণায় যা জানা যায় তা সত্যিই বিষ্ময়কর।
এই গবেষণার ফলে রোমান সভ্যতায় ব্যবহৃত প্রাচীন সভ্যতার ব্যাটারির খোঁজ পাওয়া যায়।
এথেকেই বোঝা যায় যে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কাছে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের নানা ধারণা এবং এর প্রয়োগ ছিল।
বিদ্যুতের আবিষ্কারক:
যদি প্রশ্ন করা হয় প্রথমবার কে বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছিল এবং কিভাবে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল তার কোন সঠিক জবাব মেলা দায়।
বিদ্যুৎ কে আবিষ্কার করেছে তা সঠিকভাবে বলা দুরহ। কারণ বিদ্যুৎ এক দিনে আবিষ্কৃত হয়নি।
এটি আবিষ্কার করতে অসংখ্য বিজ্ঞানীকে যুগ যুগ ধরে প্রচুর গবেষণা করতে হয়েছে।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে ১৮২০ থেকে ১৮৩০ এর দশকে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের বুনিয়াদী তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। তাঁর আবিষ্কৃত সেই প্রাথমিক তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই আজও বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে আসছে। তাই তাকেও বিদ্যুতের আবিষ্কারক বলা হয়।
চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে তারের কুন্ডলী বা তামার পাতের ঘূর্ণনের মাধ্যমে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা হতো।
বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করাই হলো বিদ্যুৎকে ব্যবহার উপযোগী করার সর্বপ্রথম ধাপ।
যেহেতু প্রকৃতি থেকে স্বাভাবিক উপায়ে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা যায় না তাই একে ব্যবহারোপযোগী করতে হলে প্রথমে অন্যকোন সাধারণ শক্তিকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করে নিতে হবে।
অন্যান্য ধাপগুলো হলো বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চারণ, বিদ্যুৎ শক্তি বিতরণ এবং বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয়।
প্রাকৃতিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর পদ্ধতি
কিন্তু সেসময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যেত না। শুধু সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যেত।
বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ আবিষ্কারের জন্য গবেষণা শুরু করেন। এবং ১৮ শতকের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে আমেরিকান বিজ্ঞানী বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন প্রথম বিদ্যুতের ওপর ব্যবহারিক গবেষণা শুরু করেন।
১৮৪০ সালে আবিষ্কৃত টেলিগ্রাফও ব্যাটারির মাধ্যমে ব্যবহার করা হতো।
এরই মাঝে ফ্যারাডের একটি আবিষ্কারের সূত্র ধরেই ১৮৩১ সালে ডায়নামো ডায়নামো আবিষ্কার করা হয়।
তবে বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিনকে বিদ্যুতের মূল আবিষ্কারক হিসেবে ধরা হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৭৯০ সালের ১৭ই এপ্রিল তিনি তার আবিষ্কৃত বিদ্যুৎ দ্বারাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে মারা যান।
বিদ্যুৎ আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন টমাস আলভা এডিসন বা টমাস এডিসন। তার বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই এই অভাবনীয় আবিষ্কারের আধুনিক যাত্রা শুরু হয়।
১৮৮২ এডিসনোই প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্টেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে বিদ্যুতের উপর গবেষণা শুরু হয় ১৬ শতকের প্রথম দিকেই। কিন্তু নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয় ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে।