ককাটিয়েল পাখি – খাঁচায় পোষা দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাতির পাখি

ককাটিয়েল পাখি – খাঁচায় পোষা দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাতির পাখি
ককাটিয়েল পাখি – খাঁচায় পোষা দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাতির পাখি

সৌন্দর্য্যের মুগ্ধতা ছড়ানো এক অপরূপ প্রাণী ককাটিয়েল পাখি। শৌখিন মানুষদের পোষমানানো পাখি হিসেবে এটি বেশ জনপ্রিয়।

সহজে কথা বলতে পারা, অপরুপ সৌন্দর্য এবং সহজে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য এটি বাজিগারের পরে খাঁচায় পোষা দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রজাতির পাখি।

নাম:

ককাটিয়েল পাখিকে ক্যারিওন এবং উইরো নামে ডাকা হয়। ইংরেজিতে cockatiel bird.

ঝুঁটিওয়ালা তোতা বলেও একে ডাকা হয়।

বৈজ্ঞানিক নাম:

ককাটিয়েল পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Nymphicus hollandicus.

পরিবার:

ককাটিয়েল Nymphicus গণের একমাত্র প্রজাতির পাখি।

তবে এই পাখিটি কাকাতুয়ার পরিবার Cacatuidae গোত্রের ক্ষুদ্রতম উপগোত্র হিসেবেও বেশ পরিচিত।

প্রজাতি:

এটি কাকাতুয়া প্রজাতির একটি পাখি। দেখতেও অনেকটা কাকাতুয়ার মতো। একারণে পূর্বে একে ছোট কাকাতুয়া বলে বিবেচনা করা হতো।

আদিনিবাস:

অস্ট্রেলিয়ার উপকূল অঞ্চলে ককাটিয়েল পাখির আদিনিবাস।

প্রাপ্তিস্থান:

ককাটিয়েল পাখির মূল আস্তানা অস্ট্রেলিয়ায়। এদের অস্ট্রেলিয়ার  বন্য প্রজাতির পাখি বলা হয়।

আকার-আকৃতি:

একটি প্রাপ্তবয়স্ক ককাটিয়েল পাখি দেখতে ১২-১৫ ইঞ্চি লম্বা।

এদের ওজন হয় ১৫০-২০০ গ্রামের মধ্যে।

গঠন ও বৈশিষ্ট্য:

ককাটিয়েল পাখির মাথায় খাঁড়া একটি ঝুঁটি রয়েছে।

এদের শরীরের নিচের দিকের পাতলা পালক রয়েছে। এই পালকগুলি নীল ও সবুজ রঙয়ের মাঝে চাপা মেঘের মত স্তরের ন্যায় রঙে রাঙা।

এদের ঠোঁটের চারপাশে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পালক রয়েছে।

প্রাকৃতিক ভাবে বন্য ককাটিয়েল পাখি ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে।

তবে গবেষকদের গবেষণার ফলে মিউটেশনের মাধ্যমে আরও বিভিন্ন রঙের পাখি জন্মানো হয়। হলুদ, কালো, সাদা, সবুজাভ, সিলভার, রুবিনো, লুটিনো ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ রঙের ককাটিয়েল পাখি উদ্বাবন করেছে তারা।

ককাটিয়েল পাখিরা মাথার উপরের ঝুঁটিটি তাদের মনমর্জি মতো নাড়াচাড়া করে থাকে। খুশি থাকলে তারা ঝুঁটি নামিয়ে রাখে। ভয় পেলে সেই ঝুঁটি খাড়া করে রাখে।

আবার ঘুম বা বিশ্রাম নেওয়ার সময় এরা ঝুঁটি কিছুটা নামিয়ে রাখে।

ককাটিয়েল পাখি যাযাবর শ্রেণীর একটি পাখি। যে স্থানে খাবার এবং পানির প্রাচুর্যতা রয়েছে সেস্থানে এদের উড়ে যেতে মুহুর্তকাল ক্ষেপন করে না।

সারণত ককাটিয়েল পাখিদের প্রকৃতিতে জোড়া কিংবা ছোট ছোট ঝাঁক হিসেবে পাওয়া যায়।

ককাটিয়েল পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এরা মানুষের মতো কথা বলতে পারে। দারুণভাবে শিশ ফোটাতে পারে এরা।

অনায়াসেই এদের কথা শেখানো যায়।

খাদ্যাভ্যাস:

বন্য ছোট ছোট প্রাণী, কীট-পতঙ্গ এদের খাবার।

এছাড়াও ছোট কচি গাছের পাতা, ফলের রস, ফুলের মধু, ফলের বীজ ইত্যাদিও খেয়ে থাকে তারা।

পাখি পালনের ক্ষেত্রে এই পাখিকে সাধারণ পাখিদের খাওয়ানোর জন্য যে শিডস পাওয়া যায় তা দেওয়া যায়। আবার শাক দেওয়া যায়। যেমন- পালং শাক, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, নিম পাতা, সজনে পাতা, ধনে পাতা, লাল শাক ইত্যাদি।

বাসস্থান:

এই পাখিকে অস্ট্রেলিয়া ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। একে অস্ট্রেলিয়ার বন্য পাখি বলা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার বুনো ঝোপঝাড়, জলাভূমি ও গুল্মভূমি গুলোতে এরা প্রাকৃতিক ভাবে বাস করে এবং বিজরণ করে।

ককাটিয়েল পাখিকে অস্ট্রেলিয়ার বন্য প্রজাতির পাখি বলা হয়
ককাটিয়েল পাখিকে অস্ট্রেলিয়ার বন্য প্রজাতির পাখি বলা হয়

মরু অঞ্চল, বিস্তৃত অনুর্বর ভূমি কিংবা কিছুটা শুস্ক জাতীয় বিস্তীর্ণ ভূমি জাতীয় অঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়। একইসঙ্গে এরা কিন্তু সবসময় পানির কাছাকাছি থাকে।

তবে পোষ মানানোর সুবাদে এখন বিশ্বের কমবেশি প্রায় সব জায়গায় এদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

প্রজনন:

ডিম পাড়ার মাধ্যমে এই পাখি বংশবৃদ্ধি করে থাকে। ককাটিয়েল পাখি ১২ মাস বয়স থেকেই ব্রিড করতে পার।

পালনের ক্ষেত্রে এদের ১৬ থেকে ১৮ মাস বয়স থেকে ব্রিড করানো যায়। তবে ব্রিডিংয়ের জন্য ১ বছর বয়স সবচেয়ে উপযোগী।

প্রতি ব্রিডে ককাটিয়েল পাখি ২ থেকে ৬টি ডিম পাড়ে।

১৯ থেকে ২৩ দিনের মধ্যেই ডিম থেকে এরা বাচ্চা ফোঁটায়।

মা ককাটিয়েল এবং বাবা ককাটিয়েল পাখি একসঙ্গে কিংবা আলাদাভাবে ডিমে তা দিয়ে থাকে।

বাচ্চাকে বড় করে তোলার জন্য মা-বাবা উভয়েই যথেষ্ট যত্নবান থাকে।

স্ত্রী ককাটিয়েল ৮ থেকে ১০ বছর এবং পুরুষ ককাটিয়েল ১২-১৪ বছর বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষম থাকে।

আয়ুস্কাল:

ককাটিয়েল পাখির গড় আয়ু ১৬-২৫ বছর।

কিছু কিছু পাখি আবার ১০-১৫ বছরও বাঁচে। আবার ৩২ বছর বাঁচারও রেকর্ডও রয়েছে।

এছাড়াও একটি ককাটিয়েল পাখির ৩৬ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকারও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এদের বেঁচে থাকা নির্ভর করে উপযুক্ত থাকার পরিবেশ, খাবার এবং উড়ার জায়গার উপর।

ককাটিয়েল পাখি দেখতে খুবই সুন্দর এবং দ্রুত কথা বলা কিংবা বংশবিস্তার করতে পারে বলে শখের পাখি পালক এবং ব্রিডারদের কাছে এদের কদর অনেক বেশি।

আরো পড়ুন:
কৌতুকপূর্ণ মজার প্রাণী – বানর 
রঙ্গের জাদুকর বহুরূপী প্রাণী – গিরগিটি 
সাগরতলের হিংস্র প্রাণী – হাঙ্গর মাছ

আর তাই এই পাখি শিকারও করা হয় অনেক বেশি।

আবার অপর দিকে অনেক ব্রিডাররাই এই পখিগুলো বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করতে না করতেই ব্রিডিং করানো শুরু করে দেন। যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর।

কমপক্ষে ১ বছর না হলে ব্রিডিং করানো উচিত নয়। কিন্তু লাভের আশায় ব্রিডাররা ১৩-১৫ মাসের মধ্যেই ব্রিডিং করানো শুরু করে দেয়। এটি একেবারে অনুচিত।

জনপ্রিয়তার কারণে বেশি শিকার এবং অপরিপক্ক ব্রিডিংয়ের কারণে এই পাখিগুলোর বিভিন্ন রকম ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন তারা বিলুপ্ত প্রজাতিতে পরিণত হবে।

একারণে সময় থাকতেই সকলের ককাটিয়েল পাখি রক্ষার্থে এগিয়ে আসা উচিত।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

১ মন্তব্য

  1. লেখাটি দারুন হয়েছে। এমন সুন্দর লেখা আরও পড়তে চাই। পাখি ছাড়াও পসুদের সম্পর্কে জানতে হবে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন