ঘাড় ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার উপায়

ঘাড় ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার উপায়
ঘাড় ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার উপায়

একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকা কিংবা সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করা বা মোবাইলে গেম খেলা, চ্যাটিং করা; যা-ই করুন না কেন, এর ফলে ঘাড় ব্যথা হতেই পারে।  

স্থির অঙ্গভঙ্গির কারণে অনেক মানুষের কাঁধ বা ঘাড়ে হঠাৎ তীব্র ব্যথা শুরু হয়ে যায়। আর এই ঘাড় ব্যথা শুরু হলে ঘাড় যেমন নড়ানো যায় না; তেমনই ব্যথায় কাতরাতে হয়।

ঘাড়ে ব্যথা হবার কারণ

ঘুমানোর ভঙ্গি, টেনশন বা স্ট্রেস, দীর্ঘক্ষণ মাথা ঝুঁকিয়ে থাকা, নরম গদিতে শুয়ে থাকা কিংবা দীর্ঘ সময় যাবৎ শরীরের অঙ্গ-ভঙ্গি বেকায়দায় থাকলে ঘাড় ব্যথা হতে পারে।

ঘাড়ের উপর পেশীর টান পড়া এবং আঘাতই হচ্ছে ঘাড় ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজ কারণ।

তবে এই ব্যথা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু নেই। প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া প্রতিকারগুলোই ঘাড় ব্যথা দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করবে।

জেনে নিন ঘাড় ব্যথা হলে কী করণীয়-

অনুশীলন

ঘাড় ব্যথা কমাতে কিছু অনুশীলন করুন। এর ফলে ঘাড়ের পেশীগুলো নমনীয় এবং আরও শক্তিশালী হবে।

অনুশীলন করতে প্রথমে আপনার মাথা সামনে-পিছনে ঝোঁকান। এভাবে অন্তত ৫ বার করুন তারপর মাথা ডান দিকে একবার ঘুরিয়ে নিন আবার বাম দিকে একবার ঘুরিয়ে নিন।

এভাবে কিছুক্ষণ চালিয়ে যান। এরপর মাথা ক্লকওয়াইজ ও অ্যান্টিক্লকওয়াইজ ঘুরান ১০ থেকে ১৫ বার।

এই অনুশীলন করার প্রথম দিকে হয়তো একটু ব্যথা লাগতে পারে। তবে এ নিয়ে ভয় পাবার কারণ নেই।

প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা পরপর এই অনুশীনগুলো করলেই খুব দ্রুত আপনার ঘাড় ব্যথা সেরে যাবে।

ম্যাসেজ থেরাপি

ম্যাসেজ থেরাপি মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী এক পন্থা। যেকোনো ব্যথাই নিরাময় করে দিতে পারে এই ম্যাসেজ থেরাপি।

এবং পাশাপাশি আরও ভালো ঘুমাতেও সহায়তা করে এই থেরাপি। এটি দেহের রক্ত প্রবাহকে উদ্দীপিত করতে এবং পেশীগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে অনেকাংশে।

ম্যাসেজ থেরাপির জন্য আপনার প্রয়োজন হবে জলপাই তেল, সরিষা তেল কিংবা নারকেল তেল।

প্রথমে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিন। তারপর সম্পূর্ণ শরীর মুছে নিন।

এবার ১ টেবিল চামচ তেল নিয়ে সামান্য গরম করুন। তারপর সেই তেল ঘাড়ে ম্যাসেজ করুন।

কয়েক মিনিট ধরে বৃত্তাকার গতিতে আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে থাকুন। প্রতিদিন সকালে এই ম্যাসেজ নিতে পারেন।

এছাড়াও দিনের যেকোনো সময় আপনি আবারও ঘাড়ে ম্যাসেজ থেরাপি প্রয়োগ করতে পারেন।

তবে  মনে রাখা জরুরী- অতিরিক্ত ব্যথা হলে কোনো আহত স্থানই ঘষবেন না।

আইস প্যাক

পেশীর প্রদাহ কমানোর জন্য বরফ দুর্দান্ত কার্যকরী। আইস প্যাক প্রয়োগের ফলে ত্বকের ভাসোডিলেশন বৃদ্ধি পায়, যা শীতল রক্তের প্রবাহকে ঘাড়ের পেশীগুলো ফিরে যেতে সহায়তা করে।  তাই এই পদ্ধতি খুবই ফলপ্রসূ।

এজন্য আপর লাগবে আইস কিউব এবং তোয়ালে।

প্রথমে তোয়ালের মধ্যে আইস কিউবগুলো রাখুন এবং এটি ঘাড়ে দিয়ে রাখুন। কয়েক মিনিটের জন্য একইভাবে রেখে দিন। দিনে ৩ থেকে ৪ বার আইস প্যাক নিতে পারেন।

আপেল সিডার ভিনেগার

আপেল সিডার ভিনেগার ঘাড় ব্যথা এবং শক্তভাব দূর করার দুর্দান্ত এক ঘরোয়া টোটকা।

আপেল সিডার ভিনেগারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এজেন্টের উপস্থিতি রয়েছে। যেগুলো ঘাড়ের পেশীর স্ট্রেস এবং ব্যথা কমাতে দারুণ সাহায্য করে।

এজন্য একটি পাত্রে আপেল সিডার ভিনেগার এবং সামান্য পানি মিশিয়ে নিন। পানি হালকা গরম হলে বেশি ভালো হয়।

মিশ্রণের মধ্যে একটি কাপড় ভিজিয়ে ঘণ্টাখানেকের জন্য ঘাড় ব্যথার জায়গায় রাখুন।

ব্যথা থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত দিনে ২ বার এর পুনরাবৃত্তি করুন।

ঘাড়ের ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়-

  • আপনি যখন ল্যাপটপ বা পিসি ব্যবহার করছেন; তখন নিশ্চিত হয়ে নিন যে মনিটরের স্ক্রিনটি একদম আপনার চোখ বরাবর আছে কি-না।

  • আপনার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করার সময়, খেয়াল রাখুন টেক্সট করার সময় যেন আপনার ঘাড়ে চাপ না পড়ে।

  • আপনার যদি মনে হয়, ঘুমের অবস্থানের কারণে ঘাড় ব্যথা করছে; তবে সঠিক বালিশ ও বিছানা বাছাই করুন।

  • ঘাড়ের পেশী শিথিল রাখার জন্য নিয়মিত ঘাড়ের ব্যায়াম করুন।

  • দীর্ঘক্ষণ যাবৎ গাড়ি চালাবেন না। কারণ এরফলসরূপ আপনার ঘাড় এবং পিঠ শক্ত হয়ে যেতে পারে।

আরো পড়ুন:
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে রান্নায় কোন ধরনের তেল ব্যবহার করা প্রয়োজন
দীর্ঘদিন ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষিত যে খাবার গুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর

তবে দীর্ঘস্থায়ী ঘাড়ের ব্যথা সাধারণত ভুল অঙ্গভঙ্গি, শারীরিক চাপ এবং খাদ্যাভাসের ফলস্বরূপ হতে পারে।

প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার নিয়েও যদি ব্যথা না কমে; তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন