কৌতুকপূর্ণ মজার প্রাণী – বানর

কৌতুকপূর্ণ মজার প্রাণী - বানর
কৌতুকপূর্ণ মজার প্রাণী - বানর

বানর আমাদের সকলের অতি পরিচিতি একটি প্রাণী। বন-পাহাড় কিংবা জঙ্গলে এদের বাস হলেও লোকালয়েও এদের প্রায়শই দেখা যায়। সাধারণত কারো ক্ষতি করে না এই প্রাণীগুলো। অনুকরণ করা এদের একটি বিশেষ গুণ।

ছোট, খুব কৌতুকপূর্ণ এবং মজার প্রাণী হিসেবেও বানরের বেশ খ্যাতি রয়েছে।

নামকরণ:

বানর ইংরেজি Monkey.

বিভিন্ন জায়গায় এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাঁদর, বান্দর, বানর এসব নামে এই প্রাণীটিকে ডাকা হয়।

বৈজ্ঞানিক নাম:

বানরের বৈজ্ঞানিক নাম Cebus albifrons.

পরিবার:

এরা কর্ডাটা পর্বের স্তন্যপায়ী প্রাণী। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত প্রজাতির প্রাণী বানর।

বুৎপত্তি:

ধারণা করা হয় আজ থেকে ৩.৫-৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে বানরের জন্ম হয়েছিল।

প্রাপ্তিস্থান:

প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা আবিষ্কৃত অসংখ্য জীবাশ্মের সন্ধান এবং তার বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায় যে বানরদের প্রথম প্রাইমেট বর্তমানের মিশরের ভূখণ্ডে জন্মেছিল। অঞ্চলটির বিস্তীর্ণ, আর্দ্র, ক্রান্তীয় বনভূমি বিশিষ্ট আবহাওয়া এই প্রাণীদের জন্য আদর্শ বাসস্থান ছিল।

তবে বর্তমানে সাধারণত এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় বানর দেখা যায়।

এশিয়ার আফগানিস্তান থেকে জাপান, ফিলিপাইন থেকে বোর্নিও পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য বানর ছড়িয়ে রয়েছে। এছাড়াও ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরে বিভিন্ন প্রজরতির বানর রয়েছে।

প্রজাতি:

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১৯ প্রজাতির বানর রয়েছে।

  • রেসাস বানর- Macaca mulatta, Rhesus Macaque

  • খাটোলেজি বানর – Macaca arctoides, Stumptail Macaque

  • আসামি বানর – Macaca assamensis, Assamese Macaque

  • প্যারাইল্লা বা লম্বালেজী বানরMacaca fascicularis, Crab-eating Macaque/Long-tailed Macaque

  • মুখপোড়া হনুমান

  • চশমাপরা হনুমান

  • Lion-tailed macaque

  • Guinea baboon

  • Black howler

  • Mandrill ইত্যাদি।

এদের মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৫ প্রজাতির বানর।

আকার-আকৃতি:

সাধারণত বানরের দেহের দৈর্ঘ্য ৩০-১০০ সেন্টিমিটার অবধি হয়ে থাকে। পুরুষ বানরের চেয়ে নারী বানরের আকার বেশি হয়ে থাকে।

তবে প্রজাতিভেদে বানরদের আকার আকৃতিতে বিশেষ পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

যেমন- পাইগিমিই মারমোসেট নামক বানরগুলো বানরদের প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট প্রজাতির। এদের দৈর্ঘ্য ১২-১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর ওজন হয় ১২০ গ্রাম।

আবার mandrill প্রজাতির বানরেরা প্রায় ১ মিটার (৩.৩ ফিট) লম্বা হয়। এবং এদের ওজন হয় ৩৫ কিলোগ্রাম।

গঠন ও বৈশিষ্ট্য:

বানর অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং অনুকরণপ্রিয় জন্তু। এরা অত্যন্ত সামাজিকও বটে।

বানরের মাথার আকার-আকৃতি বা গঠন এদের প্রজাতির উপর নির্ভর করে। মাথাটি ছোট-বড়, প্রসারিত, বৃত্তাকার কিংবা ত্রিভুজাকারও হতে পারে। বানরের মস্তিষ্ক উন্নত মস্তিষ্ক।

মাথার সামনের অংশটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রসারিত হয়ে থাকে। নাসারিকা একে অপরের কাছাকাছি অবস্থিত থাকে। এবং চোখ গভীর কোটরবিশিষ্ট হতে পারে, অনেক সময় বড় হতে পারে।

মানুষের মতো এদেরও ২টি হাত এবং ২টি পা রয়েছে। যেগুলোর সাহায্যে এক গাছ থেকে অন্য গাছে, এক ডাল থেকে অন্য ডালে এরা লাফিয়ে বেড়ায়। তাদের হাতগুলি বেশ বিকাশযুক্ত এবং বানরেরা তাদের হাতগুলি মানুষের হাতের মতোই ব্যবহার করে।

হাতের থাবা চ্যাপ্টা। এদের হাতের থাবাও মানুষের মতো একই, যা অন্যান্য সব জন্তু থেকে আলাদা।

একটি বানর প্রাপ্তবয়স্ক হতে সর্বোচ্চ ২-৩ বছর লাগে
একটি বানর প্রাপ্তবয়স্ক হতে সর্বোচ্চ ২-৩ বছর লাগে

কিছু কিছু প্রজাতির বানরের লেজ রয়েছে। যাদের লেজ রয়েছে তারা লেজের সাহায্যে গাছে ঝুলে থাকে। প্রাজাতিভেদে লেজেরও রয়েছে বিভিন্ন আকার। কিছু কিছু বানরের লেজের আকার তাদের শরীরের আকার ছাড়িয়ে যায়। আবার কিছু বানরের লেজের আকার ১ মিটার বা তার বেশিও হতে পারে।

এদের গায়ের রঙ কালো, বাদামী, খয়েরী, লালচে বাদামী রঙের হয়ে থাকে।

পরস্পরের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বানররা বিভিন্ন রকম শব্দ করে।

খাদ্যাভাস:

সাধারণত এই প্রাণীটি নিরামিষভোজী। তাজা ফল, ফলের রস, ফুলের মুকুল, গাছের পাতা বা কচি কান্ড, বীজ, মাশরুম, বাদাম এদের খাবার।

তবে প্রজাতি ভেদে এদের খাবার-দাবারে নানা বৈচিত্রতা রয়েছে। অনেক প্রজাতি ছোট ছোট পোকামাকড় বা তাদের লার্ভা, কৃমি, মাকড়সা, মিঠা জল, ছোট সরীসৃপ খেয়ে জীবনধারণ করে।

বাসস্থান:

অধিকাংশ প্রজাতির বানর গাছে বসবাস করে।

পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, জলাবদ্ধ অঞ্চল, সমভূমি বা নদীর উপত্যকায় এদের দেখা যায়।

অনেকসময় লোকালয়ের খুব কাছেও এদের নিভৃতে বাস করতে দেখা যায়।

প্রজনন:

বানরেরা সারা বছরই প্রজনন করতে পারে; তবে বেশিরভাগ সময় মার্চ-জুনেই করে। যৌনপ্রজননের মাধ্যমে এরা বংশবৃদ্ধি করে থাকে।

বানরের গর্ভকালীন সময় প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। স্ত্রী বানর গর্ভধারণের ১৬২-১৮৬ দিন পর সচরাচর একবারে কেবলমাত্র একটি বানর বাচ্চার জন্ম দেয়।

বাচ্চারা মাতৃদুগ্ধ পান করে বাড়তে থাকে এবং ১ বছর বয়স পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করে।

আরো পড়ুন:
রঙ্গের জাদুকর বহুরূপী প্রাণী – গিরগিটি 
তৃণভোজী বিশালাকার প্রাণী – গন্ডার 
সাগরতলের হিংস্র প্রাণী – হাঙ্গর মাছ

বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছালে এই জীব নিজ পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এবং একটি স্বতন্ত্র, বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়।

৩-৪ বছর বয়সে একটি বানর বাচ্চা বয়ঃপ্রাপ্ত হয়।

আয়ুস্কাল:

প্রজাতি ভেদে একেক বানরের জীবনকাল একেক রকম হয়।

তবে সাধারণত ১৬-২০ পর্যন্ত বাঁচে।

কোন কোন বানর ২৫-৩০ বছর পর্যন্তও বেঁচে থাকে।

মজার প্রাণী বিধায় প্রাণীটিকে ব্যবহার করে অনেকেই ব্যবসায় করে। কেও সার্কাস দেখায়। কেও রাস্তায় নাচিয়ে টাকা আয় করে। আর এসব কারণে বানরদের বেআইনিভাবে বন-জঙ্গল থেকে ধরে আনা হয়। যার কারণে বানররা মানুষের তোপের মুখে পড়ে ধ্বংশের দিকে পতিত হয়েছে। ইতো মধ্যে এদের অনেক প্রজাতি বিলুপ্তও হয়ে গেছে।

তাই তাদের রক্ষার্থে আমাদের সরকার এবং বন বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর দেওয়া বাঞ্চনীয়।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন