অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট – প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার বিক্রি

অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট - প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার বিক্রি
অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট - প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার বিক্রি

অনলাইন প্লাটফর্মটি বর্তমানে বেশ সারা জাগালেও এতদিন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠেনি অনেকের কাছেই। আসছে ইদ-উল-আযহা। অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার পর যদি দেখা যায়- ছবিতে যেমন দেখেছি, বাস্তবে তেমন আকর্ষণীয় নয়, কিংবা বড় গরু দেখিয়ে ছোট গরু দেওয়া হয়েছে, অথবা দেখা গেলো গরুটি রোগগ্রস্ত। তখন কী হবে?

এতদিন অধিকাংশ ক্রেতারই ছিল এ ধরনের নানা প্রশ্ন।

কিন্তু সকল দ্বিধা কাটিয়ে এবার অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট বসেছে, রীতিমতো জমে উঠেছে অনলাইনভিত্তিক এই হাটের কেনাবেচা।

গত ২ জুলাই তারিখ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় অনলাইনে কোরবানির পশুর হাটের কার্যক্রম আরম্ভের পর সর্বশেষ ১৩ জুলাই তারিখ পর্যন্ত মাত্র ১২ দিনেই ১ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা মূল্যের ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৬টি গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে।

এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে বিক্রয় হয়েছে ১৬ হাজার ৮০৮টি পশু।

আরও স্বস্তির বিষয় প্রতিদিনই পশু বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে। ১৩ জুলাই মঙ্গলবার এক দিনেই বিক্রি হয়েছে মোট ২৭ হাজার ৬০৮টি গবাদিপশু।

গরু কিনলে কেমন হবে?

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে অনলাইনে একই প্ল্যাটফরমের আওতায় সারা দেশে অন্তত ২৪১টি পশুর হাট থেকে কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও তার বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক ফেসবুক পেজ থেকে কোরবানির পশু বিক্রি করা হচ্ছে এবার।

সেসব ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ব্যক্তিমালিকানায় পশু বিক্রির সেসব তথ্য পাওয়া গেলে বিক্রির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।

এই সূত্রটি জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে মূলত গত বছর থেকেই অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট বসেছ।

কিন্তু এ বছর বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে, আর তা যে এতটা বাড়বে এটা ছিল কল্পনারও বাইরে।

ক্রেতাদের মন থেকে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনা নিয়ে যেসব দ্বিধা-সংকোচ বা ভীতি ছিল তা অনেকটাই কেটে গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মারফত জানা যায়, গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি।

আর কোরবানি হয়েছে মোট ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৭টি গবাদি পশু। তার মধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে গবাদি পশু বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি।

আর এ বছর কোরবানির পশুর মধ্যে ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৬৫টি পশুসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।

যে সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার বেশি।

আর এবার করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অনলাইন থেকে কোরবানির পশু বিক্রির পরিমাণ কয়েক লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, অনলাইনে গরু কেনা-বেচায় কোনো খরচ না থাকায় প্রতিনিয়ত এই মাধ্যম জনপ্রিয় হচ্ছে।

কেউ যদি অনলাইনে গরু বিক্রি করতে চায় সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে জানালেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনলাইন প্ল্যাটফরমে সেই পশুর ছবিসহ সমস্ত তথ্য আপলোড করে দিচ্ছেন।

ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ খামার রয়েছে।

এগুলোর মধ্যে ঢাকা শহর বা এর আশপাশের খামারের সংখ্যাই ৮ হাজারের বেশি। এসব খামারগুলোর রয়েছে নিজস্ব ফেসবুক পেজ।

খামারের পাশাপাশি তারা তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমেও কোরবানির পশু বিক্রি করছে।

অনলাইনে কেনা পশু ত্রুটিযুক্ত হলে কী করবেন

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত ডিজিটাল হাট-এর নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিক্রেতার ডেলিভারি করা কোরবানির পশুটি যদি ত্রুটিযুক্ত হয়, যে পশুর ছবি দেখে অনলাইনে অর্ডার করা হয়েছে তার সঙ্গে যদি মিল না থাকে, পশুর ওজনের ক্ষেত্রে বেশি অসামঞ্জস্য (১০% এর বেশি) থাকলে কিংবা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে যদি পশুটি ক্রেতা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে সেক্ষেত্রে বিক্রেতা তাৎক্ষণিক সমমূল্যের/সমওজনের আরেকটি সমজাতীয় পশু ক্রেতাকে যথাসময়ের মধ্যে দিতে বাধ্য থাকবেন।

আরো পড়ুন:
সম্পদ কত হলে কোরবানি দেয়া প্রয়োজন! 
কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা 
ঢাকায় পশু আনতে রেলের ‘ক্যাটল সার্ভিস’

এছাড়া, বিক্রেতা/মার্কেটপ্লেস যথাসময়ের ভেতর ক্রেতার অথবা স্লটারিং হাউজে কোরবানির পশু সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে বিক্রেতা/মার্কেটপ্লেস সেই পশুর সমপরিমাণ মূল্যের দ্বিগুণ অর্থ ক্রেতাকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে।

একই প্ল্যাটফরমে ২৪১ ডিজিটাল হাট

এবারই প্রথম একই প্ল্যাটফরমে নিয়ে আসা হয়েছে সারা দেশের মোট ২৪১টি ডিজিটাল কোরবানির হাট। মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন (ই-ক্যাব)-এর যৌথ প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে এবং এটুআই-এর কারিগরি সহায়তায় এই হাটের আয়োজন করা হয়েছে।

১৩ জুলাই এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সম্মিলিত কোনবানির হাট উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

ডিজিটাল হাটের ওয়েব ঠিকানা: www.digitalhaat.net।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন