শরীরকে সুস্থ রাখতে শরীরচর্চা এবং পরিমিত খ্যাদ্যাভাসের কোন বিকল্প নেই। আর শরীরচর্চার সবচেয়ে সহজ একটা পদ্ধতি হচ্ছে নিয়মিত হাঁটা। হাঁটার অভ্যাস দূর করে দিতে পারে আপনার অর্ধেকের বেশি রোগ। তাই জেনে নিন সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কতক্ষণ হাঁটবেন।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে নানা রকম রোগ। এগুলোর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো- হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, মাংসপেশির শক্তি কমে যাওয়া, আথ্রাইটিস, হাড়ের ক্ষয়সহ এটা-সেটা আরো কত রোগ।
একটা বয়সের পর মানুষের শরীরিক সুস্থতা নির্ভর করে নিয়মিত শরীরচর্চা এবং পরিমিত খাদ্যাভাসের উপর। শরীরকে সতেজ,চাঙ্গা এবং সুস্থ রাখতে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন।
হাঁটার ফলে শরীরের অনেক রোগ-বালাই তো দূর হবেই, এর পাশাপাশি ওজন কমবে এবং শরীরও থাকবে একদম সুস্থ।
নিয়মিত হাঁটলে যে শরীরের উপকার হয় এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে রোজকার যে হাঁটা তা কিন্তু শরীরচর্চার মধ্যে পড়ে না। একটা নির্দিষ্ট পরিমাপ এবং সময় রয়েছে। তাহলে সুস্থ থাকতে কতক্ষণ হাঁটবেন?
উত্তর হচ্ছে, আপনাকে প্রতিদিন হাঁটতে হবে ১০,০০০ পা! এ সংখ্যাটি নিয়ে একটি প্রচলিত গল্পও আছে। জাপানের অধ্যাপক ইয়োশিরো হাতানো ১৯৬৫ সালে এই নিয়মিত হাঁটার এইসংখ্যাটি আবিষ্কার করেন।
অলিম্পিকের মাঠে যাওয়ার লক্ষ্যে তিনি প্রতিদিন ১০,০০০ পা হাঁটা শুরু করেন। টানা ১ মাস এভাবে হাঁটার পর তিনি খেয়াল করেন তাঁর হৃদযন্ত্রের প্রচুর উন্নতি হয়, এবং সেইসাথে কমে যায় অনেকটা ওজনও।
এরপর তিনি পরে পরীক্ষা করে দেখান যে, প্রতিদিন আমাদের শরীর থেকে যে পরিমাণ ক্যালরি ঝরানো উচিত, তার পুরোটাই সম্ভব এই পরিমাণ হেঁটে! আর এই ১০,০০০ পা হাঁটার মানে আপনি ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে ফেললেন।
তবে হালের গবেষকরা বলছেন, প্রতিদিন অন্তত ৪০/৪৫ মিনিট হাঁটলে তা শরীরের পক্ষে ভালো। এছাড়াও কারও যদি হাঁটতে ভালো লাগে তবে সেই হাঁটার সময়টা ১ ঘণ্টা পর্যন্তও হতে পারে।
আর যারা বেশিক্ষণ হাঁটতে পারেন না তারা ৪০ মিনিট হাঁটার সময়টাতে মাঝখানে ১০ মিনিটের বিরতি নিতে পারেন। ৫ দিন ৩০ মিনিট করে ১৫০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করলেও শরীর সুস্থ থাকবে। তবে মনে রাখা উচিত- কখনই ৩০ মিনিটের কম হাঁটা ঠিক হবে না।
হাঁটার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকাল ও বিকেল। হাঁটার সময় অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে বা বুঝতে পারেন না যে, হাঁটার গতি কেমন থাকা ভালো। হাঁটার জন্য সেভাবে নির্দিষ্ট কোনো গতি নেই।
তবে প্রথমে হাঁটার অভ্যাস তৈরির জন্য ধীরে ধীরে শুরু করে তারপর ক্রমশ গতি বাড়াতে হবে। অতিরিক্ত গতি বৃদ্ধির কোন দরকার নেই, নিজের শরীরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যতোটুকু সম্ভব গতি বাড়াতে হবে।
ঘুম থেকে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটতে যাওয়া উচিত নয়। ঘুম থেকে ওঠার অন্তত ৩০ মিনিট পর হাঁটতে বের হওয়া উচিত। আর কারও যদি সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার ব্যস্ততা থেকে থাকে তাহলে ঘুম থেকে একটু আগে ওঠার অভ্যাস করুন।
একটা কথা মনে রাখবেন, শরীর খারাপ থাকলে কখনো জোর করে হাঁটা ঠিক নয়। হার্টের রোগীরা কখনো সকালে হাঁটতে যাবেন না। কারণ হার্টের রোগীরা যদি সকালে হাঁটে তাদে হার্ট অ্যাটক হওয়ার সম্ভবনা থাকে।