সম্পদ কত হলে কোরবানি দেয়া প্রয়োজন!

সম্পদ কত হলে কোরবানি দেয়া প্রয়োজন!

আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের অনন্য মাধ্যম হচ্ছে কোরবানি। এটি একটি আর্থিক এবং আত্মিক ইবাদত। একনিষ্ঠ নিয়তে নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ বা টাকার মালিকের পক্ষে কোরবানি করা আবশ্যক। কিন্তু কী পরিমাণ সম্পদ বা টাকা থাকলে কোরবানি দেয়া প্রয়োজন?

কোরবানি প্রতিবছরে একবার করে দিতে হয়। এ কারণেই অনেকেই জ্ঞাত নন যে, কী পরিমাণ সম্পদ বা টাকা থাকলে কোরবানি দেয়া প্রয়োজন।

এটা না জানার ফলে অনেকের ওপর কোরবানি আবশ্যক হওয়া সত্বেও কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত থেকে তারা বিরত থাকে।

টাকা বা সম্পদ এর পরিমাণ কত হলে কোরবানি আবশ্যক; এ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলারদের কাছে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।

‘পরিবারের খরচ মেটানোর পরেও যদি জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপা থাকে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপার বাজার দর অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা থাকে ওই ব্যক্তির জন্য কোরবানি আবশ্যক।

হিজরি বছরের জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে কোরবানির পশু জবাই করার বিধান রয়েছে।

কোরবানি দেওয়ার পূর্বশর্ত হলো এ দিনগুলোতে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের খরচ ছাড়া অতিরিক্ত নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ বা টাকার মালিক হলেই তার ওপর কোরবানি আবশ্যক।

সম্পদ বা টাকার নিসাব:

সম্পদের নিসাব হলো- সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা এর সমমূল্য কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা কিংবা তার সমমূল্যের সম্পদ থাকতে হবে। আর কোরবানি দেয়ার জন্য এ পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ ১ বছর ব্যাক্তির মালিকানাধীন থাকতেই হবে এমন কোনো শর্ত প্রযোজ্য নয়।

১. স্বর্ণের নিসাব ও মূল্যের বিবরণ

কোন ব্যক্তি যদি স্বর্ণকে নিসাব হিসেবে ধরে তবে তাকে সাড়ে ৭ ভরি/তোলা স্বর্ণ মূল্যের উপর টাকার পরিমাণ গণনা করতে হবে। যেমন চলতি বছরের জুন মাসের হিসাব অনুসারে-

  • ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রাম) মূল্য- ৭২ হাজার টাকা হিসাবে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণের দাম হল- ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

  • ২১ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম ৬৯ হাজার টাকা হিসাবে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণের মূল্য- ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা।

  • ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম ৬০ হাজার টাকা হিসাবে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণের মূল্য- ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

  • সনাতন পদ্ধতিতে প্রতি ভরি স্বর্ণের মূল্য- ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা হিসাবে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণের দাম- ৩ লাখ ৭১ হাজার ২৫০টাকা (স্বর্ণের এ দাম নির্ধারিত নয়, ওঠা নামা করতে পারে। সেক্ষেত্রে বাজার দর হিসাবের উপর নির্ভর করে নিসাব নির্ধারণ করতে হবে।)

সুতরাং যারা স্বর্ণের নিসাবে কোরবানি করবেন, তাদের জন্য প্রায় ৪ লাখ টাকা বা সম্পদ জিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখ (এ ৩ দিন) তাদের মালিকানাধীন থাকলে তার কোরবানি দেয়া প্রয়োজন।

খরচ ছাড়া অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ বা টাকার মালিক হতে হবে
খরচ ছাড়া অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ বা টাকার মালিক হতে হবে

২. রুপার নিসাব ও মূল্যের বিবরণ

কোন ব্যক্তি যদি রুপাকে নিসাব হিসেবে ধরে তবে তাকে সাড়ে ৫২ ভরি/তোলা রুপার মূল্যের উপর টাকার পরিমাণ গণনা করতে হবে। যেমন চলতি বছরের জুন মাসের হিসাব অনুসারে-

  • ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা হিসাবে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্য হয়- ৭৯ হাজার ৫৯০ টাকা।

  • ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৪৩৫ টাকা হলে সাড়ে ৫২ তোলা বা ভরির মূল্য দাড়ায়- ৭৫ হাজার ৩৩৭ টাকা পঞ্চাশ পয়সা।

  • ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা হলে সাড়ে ৫২ তোলা/ভরির মূল্য হয়- ৬৪ হাজার ৩১২ টাকা পঞ্চাশ পয়সা। এবং

  • সনাতন পদ্ধতিতে প্রতি ভরি রুপার দাম ৯৩৩ টাকা হিসাব করলে সাড়ে ৫২ তোলা/ভরির মূল্য ৪৮ হাজার ৯৮২ টাকা পঞ্চাশ পয়সা।

তাই এই হিসাব অনুযায়ী কোন ব্যক্তির কাছে যদি সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকাও থাকে তবে তাকে রুপার নিসাব পরিমাণ অর্থের বিধান অনুযায়ী কোরবানি করতে হবে।

সুতরাং পরিবারের খরচ মেটানোর পরও যদি কোন ব্যাক্তির জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপা থাকে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণ স্বর্ণ বা রুপার বাজার দর অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য কুরবানি দেয়া আবশ্যক।

রদ্দুল মুহতার গ্রন্থে এসেছে, ‌সুস্থ মস্তিষ্ক, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম নর-নারী ঋণমুক্ত থাকা অবস্থায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। এক্ষেত্রে কোরবানি না করলে ওয়াজিব তরকের দায়ে গোনাহগার হবেন।

বাদায়েউস সানাঈ গ্রন্থে এসেছে, ‌‌নাবালেগ; পাগল; যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকও হয় তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তবে তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে থেকে কোরবানি করলে তা বিশুদ্ধ হবে।

আরো পড়ুন:
ঢাকায় পশু আনতে রেলের ‘ক্যাটল সার্ভিস’ 
সুস্থ কোরবানির গরু চেনার উপায় 
নেহারী রান্না করুন খুবি সহজ উপায় – রেসিপি টিপ্স

দুররুল মুখতার গ্রন্থে এসেছে, মুসাফিরের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। মুসাফির দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে ব্যক্তি কমপক্ষে ৪৮ মাইল সফরের নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে।

বাদায়েউস সানাঈতে এসেছে, কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য কুরবানির ৩ দিনই মুকিম থাকা জরুরি নয়। বরং কেউ যদি এ ৩ দিনের শুরুর দিকে মুসাফির থাকে আর শেষ দিকে মুকিম হয়ে যায় তবে তার নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার কোরবানি ওয়াজিব হবে। আর কেউ যদি এ ৩ দিনের শুরুতে মুকিম থাকে এবং শেষের দিকে মুসাফির হয়ে যায় তাহলে তার ওপরে কোরবানি ওয়াজিব হবে না।’

আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম উম্মাহর সব নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদেরকে যথাযথভাবে কোরবানি আদায় করার মাধ্যমে তার নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন