ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাস এবং এসম্পর্কিত কিছু তথ্য
ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাস এবং এ সম্পর্কিত কিছু তথ্য
বিগত ১১ই জুন থেকে শরু হয়েছে ২০২০ সালের উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। যা ইউরো ২০২০ নামে পরিচিত।
আজকে আমরা উয়েফা ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ বা ইউরো ২০২০ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ সাধারণত উয়েফা ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আনুষ্ঠিানিকভাবে ইউরো হিসেবেও পরিচিত। ইউরো হচ্ছে উয়েফা দ্বারা আয়োজিত চতুর্বাষিক আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগীতা।
ইতিহাস:
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজও চলমান রয়েছে উয়েফা ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগীতা।
কিভাবেশুরুহয়েছিল:
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ প্রথমে মূলত ইউরোপীয়ন্যাশন্সকাপ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬৮ সালে এর বর্তমান নামকরণ করা হয়।
এটি একটি প্রাথমিক পর্যায়ের ফুটবল প্রতিযোগীতা, যেখানে ইউরোপীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের অর্থ্যাৎ উয়েফা সদস্যপ্রাপ্ত পুরুষদের জাতীয় ফুটবল দলগুলো প্রতিযোগীতা করে থাকে।
১৯২৭ সালে, সর্বপ্রথম ফরাসি ফুটবল ফেডারেশন এর মহাসচিব অঁরি দলোনে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি ফুটবল প্রতিযোগীতার আয়োজন করার ধারণা প্রদান করেন। তাঁর উদ্যোগেই সেবার ইউরো চ্যম্পিয়ন অনুষ্ঠিত হয়।
কিন্তু দলোনের মৃত্যুর ৩ বছর পর ১৯৫৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত এই প্রতিযোগীতার আর কোন আসর অনুষ্ঠিত হয়নি।
পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠাতা দলোনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, প্রথমে তার নামে এই প্রতিযোগীতার শিরোপার নামকরণ করা হয়েছিল।
১৯৬০ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আসরটির বাছাইপর্বে অংশগ্রহণকারী ১৭টি দলের মধ্যে সর্বমোট ৪টি দল চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করেছিল।
এই প্রতিযোগীতাটি ১৯৬০ সাল থেকে প্রতি ৪ বছর অন্তর অন্তর বিশ্বকাপের মাঝে প্রতি জোড় বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
কিন্তু শুধুমাত্র ২০২০ সাল অর্থ্যাৎ এবারের আসরটিই কোভিড-১৯ এর কারণে পিছিয়ে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
১৯৯৬ সালের আসর হতে পরবর্তী প্রায় সকল আসরেই প্রতিযোগীতাটির নাম উল্লেখ করা হয় উয়েফাইউরো নামে।
শিরোপার বৈশিষ্ট্য:
ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগীতায় বিজয়ীকে অঁরি দেলোনে শিরোপাটি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। যেটি উয়েফার প্রথম সাধারণ সম্পাদক অঁরি দেলোনের সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল।
১৯৬০ সালে ইউরো প্রতিযোগিতার প্রথম আসরের ৫ বছর আগেই মৃত্যুবরণ করায় দেলোনের ছেলে পিয়ের দেলোনে এই চ্যাম্পিয়ন শিরোপাটি তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন।
প্রথমে ইউরো চ্যাম্পিয়ন শিরোপাটিতে “ক্যু দোরোপে’, ‘ক্যু অঁরি দেলোনে” এবং সামনে “শম্পিওনাত দোরোপে” এবং পিছনে একটি জাগল করা বালক উল্লেখ থাকতো। তবে বর্তমানে এটির সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ পুরানো শিরোপাটি আকারে ছোট ছিল।
এরপর তৈরি হয় নতুন শিরোপা। নতুন শিরোপাটি খাঁটি রৌপ্য দ্বারা তৈরি। এর ওজন ৮ কিলোগ্রাম (১৮ পা) এবং উচ্চতা ৬০ সেন্টিমিটার (২৪ ইঞ্চি)।
আর অপরদিকে পূর্বের শিরোপাটির ওজন ছিল মাত্র ২ কিলোগ্রাম (৪.৪ পা) আর উচ্চতা ছিল ১৮ সেন্টিমিটার (৭.১ ইঞ্চি)।
পুরানো শিরোপাটি তৈরিতে যে মার্বেল স্তম্ভমূলটি ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নতুন শিরোপাটির রৌপ্য ভিত্তিটি স্থিতিশীল করার জন্য আরও বড় করতে হয়েছিল।
শিরোপাটির পিছনে “ক্যু অঁরি দেলোনে” শব্দটির নিচে বিজয়ী দেশের নাম খোদাই করা হয়।
এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে, জাগল করা বালকের চিত্রটি শিরোপার গায়ে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
এই প্রতিযোগীতার বিজয়ী দল ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন খেতাব অর্জন করে।
যে দল বিজয়ী এবং রানার-আপ হয় সে দলের খেলোয়াড় ও কোচদের যথাক্রমে স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক প্রদান করা হয়।
শিরোপাঅর্জন:
এ পর্যন্ত অর্থ্যাৎ ২০১৬ পর্যন্ত সর্বমোট ১৫টি ইউরো কাপ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে সর্বমোট ১০টি জাতীয় দল শিরোপা লাভ করেছে।
তদের মধ্যে,
জার্মানি ৩টি শিরোপা অর্জন করেছে।
স্পেন ৩ টি (এই প্রতিযোগীতার ইতিহাসে একমাত্র দল যেটি টানা ২ বার শিরোপা অর্জন করেছে; ২০০৮ এবং ২০১২ সাল।
ফ্রান্স অর্জন করেছে ২টি শিরোপা
সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্জন করেছে ১টি
ইতালি ১টি
চেকোস্লোভাকিয়া ১টি
নেদারল্যান্ড ১টি
ডেনমার্ক ১টি
গ্রিস ১টি এবং
পর্তুগাল ১টি
ইউরোর ইতিহাসে সর্বাধিক ৫গোলস্কোরার:
ফ্রান্সের মিশেল প্লতিনি
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (পর্তুগাল)
অ্যালান শিয়ারার (ইংল্যান্ড)
আতোয়াঁ গ্রিজম্যান (ফ্রান্স)
রুড ভ্যান নিস্তেলরুই (নেদারল্যান্ডস)
ইউরো ফুটবল চ্যাম্পিয়শিপে জয়লাভ করে আনন্দোল্লাসরত ফ্রান্স
এবারেরইউরো২০২০চ্যাম্পিয়নশিপ:
উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ১৬তম আসরে চূড়ান্ত পর্ব যেখানে ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফার অন্তর্ভুক্ত ২৪টি জাতীয় দল অংশগ্রহণ করছে।
এই আসরটি ২০২১ সালের ১১ জুন থেকে ১১ জুলাই ইউরোপের ১১টি দেশের ১১টি শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রতিবার এই প্রতিযোগীতা দেখার জন্য স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে হাজার হাজার দর্শকের আনাগোনা থাকতো। কিন্তু এবার করোনার কারণে প্রতিটি স্টেডিয়াম নির্ধারণ করেছে ২০-৫০ শতাংশ দর্শক থাকবে। তবে তাও শর্তসাপেক্ষে।