কোপা আমেরিকা ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং এর বিভিন্ন রেকর্ড
কোপা আমেরিকা ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং এর বিভিন্ন রেকর্ড
চলছে কোপা আমেরিকা ফুটবল টুর্নামেন্ট। যেটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো ফুটবল টুর্নামেন্ট। এবারের টুর্নামেন্টটি চতুর্বষীয় আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগীতা কোপা আমেরিকার ৪৭তম আসর।
বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো মহাদেশীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকা দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বা কনমেবলের একটি নিয়মিত ফুটবল প্রতিযোগীতা।
বিশ্বকাপের বাইরে পৃথিবীতে যে কয়টি বড় ফুটবল আসর বসে তার মধ্যে অন্যতম এই কোপা আমেরিকা। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের চোখ আটকে থাকে এই প্রতিযোগীতাকে ঘিরে।
ফুটবলের আঁতুরঘর লেটিন আমেরিকার ১০টি দেশ নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই বর্ণাঢ্য আয়োজন।
আমাদের আজকের প্রতিবেদন কোপা আমেরিকার ইতিহাস সম্পর্কে-
ইতিহাস:
সালটা ১৯০৯, মে বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিবেশী দেশ উরুগুয়ে আর চিলিকে নিয়ে আয়োজন করে এক ফুটবল টুর্নামেন্টের।
যার নাম দেওয়া হয় Copa Centenario Revolución De Mayo. কেবল দক্ষিণ আমেরিকা নয়, বিশ্বফুটবলেও এমন প্রতিযোগীতার আয়োজন এর আগে কেও কখনো দেখেনি।
একই শহরের দুই মাঠে অনুষ্ঠিত ইতিহাসের প্রথম সেই আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে শিরোপা জয় করে আর্জেন্টিনা।
যদিও পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল সংগঠন Conmebol ঐ প্রতিযোগীতার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু জনমানুষের কাছে ফুটবল ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যপকভাবে।
আর তাই আর্জেন্টিনাও সাহস পেয়েছিল আরও বড় পরিসরে টুর্নামেন্ট আয়োজনের। ওই টুর্নামেন্টের ৭ বছর পরে আর্জেন্টিনার স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আবারো একটি বড়-সড় টুর্নামেন্টের আয়োজন করে।
আর আগের ৩ দলের সঙ্গে নতুন দল হিসেবে যুক্ত হয় ব্রাজিল। টুর্নামেন্টের নামটিও রাখা হয় বাহারি। Campeonato Sudamericano de Football.
পরবর্তীতে সেই ফুটবল আসরটি স্বীকৃতি পায় কোপা আমেরিকার প্রথম আসর হিসেবে। অর্থ্যাৎ ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগীতার বেশ আগেই এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়।
তবে প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকার সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। আর সেটা সম্ভব হয়েছিল টুর্নামেন্টের ফরম্যাটের কারণে।
আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা ১৯১৬
কোন নির্দিষ্ট দেশে টুর্নামেন্ট আয়োজন না করে সেইবার খেলা হয়েছিলো home and away ভিত্তিতে।
১৯৭৫ সালের টুর্নামেন্টটাকেই সত্যিকার অর্থে কোপা আমেরিকা বলা যায়।
এর আগের ২৯ আসরের নাম ছিল সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশীপ। ৩০তম আসরে যার নাম বদলে হয় কোপা আমেরিকা।
কয়টিদেশকোপাআমেরিকায়রয়েছে:
মোট ১০টি দেশের অংশগ্রহণে এই ফুটবল প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়।
১০টিদেশ–
ব্রাজিল
আর্জেন্টিনা
উরুগুয়ে
প্যারাগুয়ে
চিলি
পেরু
ইকুয়েডর
বলিভিয়া
কলম্বিয়া
ভেনিজুয়েলা
এছাড়া ১৯৯০ সাল থেকে উত্তর আমেরিকা ও এশিয়া থেকে ২টি দেশকে অতিথী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ল্যাটিন আমেরিকা ছাড়া আরও যে দেশগুলো এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে খেলেছে তারা হলো-
কোস্টারিকা
হাইতি
হন্ডুরাস
জ্যামাইকা
জাপান
মেক্সিকো
পানামা
কাতার ও
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
শিরোপাঅর্জন:
এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৪৬টি আসরে মোট ৮টি দল শিরোপা অর্জন করেছে।
উরুগুয়ে সর্বাধিক ১৫বার শিরোপা জিতেছে।
তাদের পরপরই ১৪ বার শিরোপা জিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আর্জেন্টিনা।
ব্রাজিল ৯ বার শিরোপা অর্জন করে শিরোপার্জনের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
Conmebol এর ১০টি দল থেকে কেবল ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা এখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।
আয়োজক দেশ:
আর্জেন্টিনা ১৯১৬ সালের প্রথম আয়োজক এবং তারা এখন পর্যন্ত ৯ বার এই আসর আয়োজন করেছে।
উরুগুয়ে আয়োজন করেছে ৭ বার।
চিলি ৭ বার।
পেরু এবং ব্রাজিল উভয়ে ৬ বার।
ইকুয়েডর ৪ বার
বিলিভিয়া এবং কলম্বিয়া ২ বার
প্যারাগুয়ে, ভেনেজুয়েলা ১ বার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র Conmebol এর বাইরে একমাত্র আয়োজক দেশ, যারা ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা আয়োজন করে।
কোপা আমেরিকার রেকর্ড
এবার চলুন জেনে নিই কোপা আমেরিকার কিছু রেকর্ড-
সর্বোচ্চ গোলদাতা:
কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়নশীপের সব আসর মিলিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা ২ জন।
তাদের একজন আর্জেন্টিনার Norberto Mতারা endez. এবং ব্রাজিলের Zizinho. তারা দু’জনই গোল করেছেন ১৭টি করে।
সবচেয়ে সফল কোচ:
আর্জেন্টিনাকে ৬ আসরে চ্যাম্পিয়ন করে কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কোচ হয়েছেন গিলেরমো স্তাবিলে৷ তাঁর ব্যবস্থাপনায় ১৯৪১, ১৯৪৫, ১৯৪৬, ১৯৪৭, ১৯৫৫ এবং ১৯৫৭ সালে কোপা আমেরিকার ট্রফি অর্জন করে আর্জেন্টিনা৷ এই ফুটবল টুর্নামেন্টের মোট ৪৪টি ম্যাচে কোচ ছিলেন তিনি৷
সবচেয়ে বেশি খেলেছিলেন যিনি:
কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড হচ্ছে চিলির সার্জিও লিভিংস্টোনের৷ সর্বোমোট ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি৷
সবচেয়ে বড় ম্যাচ:
১৯১৯ সালের ফাইনাল ম্যাচটি ছিল কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি সময়ের ম্যাচ৷ সেই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণের জন্য টানা আড়াই ঘন্টা খেলে উরুগুয়েকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল৷
কোপায় পেলে এবং ম্যারাদোনা:
সর্বকালের সেরার প্রশ্নে সাধারণ দর্শক তো বটেই ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও দ্বিধায় পরে যান যেকোন একজনকে এগিয়ে রাখার প্রশ্নে।
কারণ দুইজনের পক্ষেই প্রচুর যুক্তি। তবে একটা জায়গায় এসে যেন দু’জনেই মিলে গিয়েছে।
নিজ মহাদেশের সর্বোচ্চ শিরোপা কোপা আমেরিকাটা কারোর পক্ষেই জেতা সম্ভব হয়নি।
মেসি যখন সেরা
কোপা আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি গোল অ্যাসিস্টের রেকর্ড আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসির৷
দলকে ১১টি গোল উপহারের পেছনে সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান ছিল তার৷
কোপা আমেরিকায় মোট ৪টি আসরে অংশ নিয়ে সর্বমোট ৮টি গোল করেছে তিনি৷
কোপা আমেরিকায় বর্তমান কিংবদন্তী লিওনেল মেসি
২০২১ সালে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল সংস্থা Conmebol কর্তৃক আয়োজিত চতুর্বষীয় আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগীতা কোপা আমেরিকার ৪৭তম আসর চলছে।
এই আসরটি ২০২১ সালের ১৩ই জুন হতে ১০ই জুলাই পর্যন্ত ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হবে।
এই আসরটি মূলত ২০২০ সালের ১২ই জুন হতে ১২ই জুলাই পর্যন্ত ২০২০ কোপা আমেরিকা হিসেবে আর্জেন্টিনা ও কলোম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল।
প্রথমে করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির কারণে আসরটি ১ বৎসরের জন্য স্থগিত করা হয়। এবং পরবর্তীতে আর্জেন্টিনায় কোভিড-১৯ এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে Conmebol ব্রাজিলকে এই আসরের আয়োজক হিসেবে ঘোষণা করে।
এই বছরের ১লা জুন নতুন আয়োজক হিসেবে ব্রাজিল সরকার ও ব্রাজিলীয় ফুটবল ফেডারেশন ব্রাসিলিয়া, কুইয়াবা, গোইয়ানিয়া এবং রিউ দি জানেইরু-কে আয়োজক শহর হিসেবে ঘোষণা করেছে।
আর এবারও বরাবরের মতোই সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের চোখ আটকে রয়েছে এই শহরগুলোতে।