ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে আসছে নতুন আইন

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে আসছে নতুন আইন
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে আসছে নতুন আইন

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে সরকার নতুন একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে৷ ঐ আইনের মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউবসহ আরও অন্যান্য যেসব সামাজিক মাধ্যম রয়েছে সেগুলোর জন্য বাংলাদেশে অফিস খোলা বাধ্যতামূলক করা হতে পারে৷

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশাপাশি এটা হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি আইন৷

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণ আইনটি পাস হলে সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে৷ অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো যেন বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করতে বাধ্য হয় সেই বিধান রাখা হচ্ছে এই আইনের আওতায়৷’’

এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি৷ তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন যে নতুন এই আইনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘‘এই বিষয়টি আইসিটি বিভাগ তদারকি করছে৷ তারাই আইনের খসড়া তৈরি করছে৷’’

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন অনেক বিষয় ছড়ানো হয়৷ এবং এর পাশাপাশি নানা ধরনের গুজবও প্রচার করা হয় অনেক সময়৷

এসকল অপরাধ ঠেকাতে এবং সামাজিক মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷

বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত আইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দেশে সেগুলোর অফিস স্থাপনেরও বিধান রাখা হবে৷ ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ফ্রান্স দেশগুলো এ ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে৷

উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে৷’’

এরইমধ্যে ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ আরও কয়েকটি সামাজিক মাধ্যম বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিবন্ধন নিয়েছে৷ জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক বাংলাদেশের জন্য একজন প্রতিনিধিও নিয়োগ দিয়েছে৷

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা যায়৷ কিন্তু বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কিংবা বিদেশিদের বিরুদ্ধে মামলা করা গেলেও তা খুব একটা ফলপ্রসু হয়না৷ আর পৃথিবীর সকল আইনের বিধান হলো, যে দেশে অপরাধ করা হবে সেদেশের আইনেই অপরাধীর বিচার হবে৷

কিন্তু পুরানো এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন আইনে সুবিধা পেতে চায় সরকার৷ জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেছেন, অনেক বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে যান দেশের বাইরে থেকে ফেসবুক পেজ কিংবা ইউটিউবে চ্যানেল খুলে দেশের বিরুদ্ধে নানান গুজব এবং অসত্য তথ্য ছাড়ায়৷ এগুলো অপরাধ, এর প্রতিকার দরকার৷

জানা গেছে, সরকার মনে করছে, যে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া যায় তারও আইনি প্রতিরোধ দরকার৷ সেই সঙ্গে তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত৷ এসব প্ল্যাটফর্মের যে কোনো দায়-দায়িত্ব থাকবেনা তা হয়না৷ আর সেজন্যই নতুন এই আইনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে৷

কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে জানা গেছে যে আইনটির খসড়া এখনো মন্ত্রণালয় পায়নি৷

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ‘‘নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিয়ে নানা রকম কথা হলেও পুরো বিষয়টি এখনো স্পষ্টত নয়৷ তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্কে যদি কোনো গুজব, অপপ্রচার বা মানহানিকর কিছু করা হয়, তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে মামলা করা যায়৷ কিন্তু সেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো প্রকার সুযোগ নেই৷

তাই আমরা ধারণা করছি বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে চাচ্ছে সরকার৷ এধরনের আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে৷ তবে তা কেমন হবে এ সম্পর্কে আইনটি না দেখে কিছুই বলার সুযোগ নেই৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তর দেন, দেশের বাইরে বাস করা বাংলাদেশি যেসব নাগরিকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশের এবং সরকারের বিরুদ্ধে নানা গুজব কিংবা অপপ্রচার চালান তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনের অধীনে বাংলাদেশে মামলা করা যায়৷ কিন্তু দেশের বাইরে থাকার কারণে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা যায়না৷

আবার বিদেশে বসে কেউ এধরণের অপরাধ করলে তিনি বাংলাদেশি বা সেই দেশের নাগরিক হলেও তার বিরুদ্ধে সেই দেশের আইনের আওতায় ব্যবস্থা নিতে হয়৷ যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে বাস্তবে ব্যবস্থা নেওয়া বেশ কঠিন৷

তবে মানবাধিকার কর্মী নূর খান ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহিতা, দায়িত্বশীলতা থাকা উচিত বলে মনে করলেও সরকারের নতুন আইন তৈরি করার এই উদ্যোগকে ভালো চোখে দেখছেন না৷

এ নিয়ে তিনি বলছেন, ”আদতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিন্তু সাধারণ মানুষের কোনো কাজে লাগছেনা৷ বরং এটাকে ব্যবহার করা হচ্ছে শুধু মানুষের মুখ বন্ধ করতে ও হয়রানি করতে৷ এবং সেইসঙ্গে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা খর্ব করতে৷ তাই নতুন আইন প্রণয়ন করলেও তা সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবেনা৷ এটাও আগের ডিজিটাল আইনের মতো ব্যবহার করা হবে বলে আমার ধারণা৷’’

কিন্তু ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে গুজব বা অপপ্রচার ছড়ায়, মানহানির ঘটনা ঘটে তার জন্য কি কোনো দায়-দায়িত্ব এদের কর্তৃপক্ষের নেই? এর জবাবে তিনি বলেন, সরকার তাদের দায়-দায়িত্বের মধ্যে আনতে নতুন আইন তৈরি না করে প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমেই কতটা চেষ্টা করছে সেটা আমরা আগে দেখতে চাই৷

আরো পড়ুন:
কে এই খাবি লামে! কিভাবে জনপ্রিয় হলেন তিনি? 
হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার একত্রিত করার চিন্তা করছে ফেসবুক

তবে তিনি এটা স্বীকার করেন যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা টুইটার তাদের নিজেদের দেশের আইনের ঊর্ধ্বে নয়৷

বাংলাদেশ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত তথ্য চায়৷ কিন্তু ২০১৬ সালে প্রথম বাংলাদেশের তথ্য দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ গত বছরেই বাংলাদেশ ফেসবুকের কাছে ২৪১টি অনুরোধ প্রেরণ করে৷ এইসব অনুরোধের মাধ্যমে ৩৭১টি ইউজার বা আইডি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য চায়৷ তারমধ্যে ১৪২টি ছিল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আর বাকি ৯৯টি ছিলো জরুরি অনুরোধ৷ কিন্তু ফেসবুক ৪৪ ভাগ ক্ষেত্রে অল্প কিছু তথ্য দিয়েছে৷

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন