পানিতে বসবাসকারী শিকারী প্রাণীগুলোর মধ্যে হাঙ্গরই সবচেয়ে ভয়ংকর। হিংস্রতার দিক থেকেও হাঙ্গর মাছ এর কোন তুলনা হয় না।
আমাদের হাঙ্গর এর জীবন বৈচিত্র্য সম্পর্কে।
নামকরণ:
হাঙ্গর বা হাঙরকে ইংরেজিতে বলা হয় শার্ক বা Shark.
বৈজ্ঞানিক নাম:
হাঙ্গর মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Selachimorpha.
পরিবার:
হাঙ্গর Animalia জগতের কর্ডাটা পর্বের এক প্রকার সামুদ্রিক মাছ।
প্রজাতি:
হাঙ্গর মাছের প্রায় ২২৫টি প্রজাতি রয়েছে।
তাদের মধ্যে কয়েকটি হলো-
তিমি হাঙ্গর
জায়ান্ট হাঙ্গর
বিগমাউথ হাঙ্গর
সাদা হঙ্গর
বাঘ হাঙ্গর
ষাঁড় হাঙ্গর
কাতরান
ক্লেডোসেলিয়া (বিলুপ্ত)
হোয়াইটটিপ হাঙর
ফিন হাঙর
Euprotomicrus bispinatus
গারার্ডযুক্ত হাঙ্গর
রিফ হাঙ্গর
হলুদ ডোরা হাঙ্গর
Rhincodon typus
হারলেকুইন হাঙর
হোববেগং হাঙর
ব্রাউনি হাঙ্গর
হাঙর-মাকো
হামারহেড হাঙ্গর
সিল্ক হাঙ্গর
আটলান্টিক হারিং
বাহামিয়ান হাঙ্গর ইত্যাদি।

প্রাপ্তিস্থান:
বিশ্বের প্রায় সব সাগর-মহাসাগরই হাঙ্গর মাছের আবাস্থল। তবে মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং অর্ধ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলো এদের অস্তিত্ত্বের প্রাচুর্য দেখা যায়।
আকার-আকৃতি:
প্রজাতি ভেদে হাঙ্গর মাছদের আকার আকৃতিতে ভিন্নতা দেখা যায়। আবার একেক প্রজাতির মাছের স্বভাব, গতিবিধিও একেকরকম।
যেমন–
Euprotomicrus bispinatus নামক প্রজাতির হাঙ্গর মাত্র এক হাত পরিমাপের হয়। এরা প্রায় ২২ সেমি থেকে ৯ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে।
আবার কিছু প্রজাতি রয়েছে যেগুলো তিমি হাঙ্গর নামে পরিচিত বৃহত্তম মাছ। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার বা ৩৯ ফিট মত লম্বা। এধরণের প্রজাতির একটি হচ্ছে Rhincodon typus.
গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
হাঙ্গর তরুণাস্থিবিশিষ্ট এক ধরনের সামুদ্রিক মাছ।
প্রজাতিভেদে হাঙ্গর মাছের বৈশিষ্ট্য এমনকি গঠনও পৃথক হয়ে থাকে। হাঙ্গরদের প্রজাতিতে ব্যাপক তারতম্য পরিলক্ষিত করা যায়।
যেমন- গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী কিছু প্রজাতির হাঙ্গর মাছ রয়েছে যারা আলোদায়ক অর্থাৎ আলো বিচ্ছুরণ করতে পারে।
ধ্বংস এবং পরজীবীর কবল থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য এদের শরীরে দেহত্বকীয় ডেন্টিক্ল থাকে। এই ডেন্টিক্লের কারণে এই প্রাণীগুলোর প্রবাহী গতিবিদ্যায়ও ভিষণ সাহায্য হয়ে থাকে।
এছাড়াও তাদের প্রতিস্থাপনযোগ্য দাঁত আছে। এই দাঁতগুলো হয় খুবই সুন্দর। এবং প্রাচীন হাঙ্গর মাছের এই একটি বৈশিষ্ট্যই তাদের মধ্যে এখনো বিদ্যমান রয়েছে।
হাঙ্গরের দাঁতগুলি সরাসরি চোয়ালের সাথে সংযুক্ত থাকে না। এদের দাঁত মাড়ির সঙ্গে যুক্ত থাকে। এবং দাঁতগুলোকে তারা সারাজীবন ক্রমাগত প্রতিস্থাপন করতে পারে।
কোন কোন হাঙ্গর জীবদ্দশায় ৩০ হাজারেরও বেশি দাঁত প্রতিস্থাপন করতে পারে।
আর তাদের এই দাঁত প্রতিস্থাপনের হার প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ দিন। এর মধ্যেই তাদের দাঁত একবারে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
হাঙ্গরের ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত প্রখর। তাদের ঘ্রাণশক্তি এতটাই শক্তিশালী যে অনেক দূরের শিকারের গতিবিধি তারা দূরদূরান্ত থেকে বুঝে নিতে পারে।
গতি:
সাধারণত, হাঙ্গরেরা গড়ে প্রতি ঘণ্টায় 8 কিলোমিটার (৫.০ মাইল) গতিতে সাঁতার কাটে। তবে শিকার বা আক্রমণ করার সময়, হাঙ্গর মাছ গড়ে প্রতি ঘন্টায় ১৯ কিলোমিটারের (১২ মাইল) অধিক গতিতে পৌঁছতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম হাঙ্গর হলো শর্টফিন মাকো প্রজাতির হাঙর। এরা প্রতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) গতিতে যেতে পারে।
প্রতিটি হাঙ্গর সাধারণত দিনে ৭০-৮০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করতে সক্ষম।

বসবাস:
পৃথিবীর প্রায় সকল সাগর-মহাসাগরে এদের বাস।
তবে বেশিরভাগই গভীর সমুদ্রে বসবাস করে থাকে।
আবার কিছু কিছু মিঠা পানির হাঙ্গরের প্রজাতিও রয়েছে। তবে তারা আকারে বেশ ছোট।
খাদ্যাভ্যাস:
সমুদ্রের মাছ, পোকা-মাকড়, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক এদের শিকারে পরিণত হয়।
প্রজনন:
নিষেকের মাধ্যমে হাঙ্গর প্রজনন করে থাকে।
অন্যান্য মাছের তুলনায় হাঙ্গর মাছ দেরিতে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। প্রায় ১০-১২ বছর বয়সে এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়।
আরো পড়ুন: তিমি মাছ – প্রাণী জগৎ ইরাবতী ডলফিন – প্রাণী জগৎ সাগরের তারকা – তারা মাছ