গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় ইলিশ খিচুড়ি রেসিপি

গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় ইলিশ খিচুড়ি রেসিপি
গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী স্টাইলে ইলিশ খিচুড়ি

চলছে বর্ষা কাল। যেকোন সময়েই নামে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির এই সময়ে খিচুড়ি খাওয়া যেন বাঙালীয়ানার এক আদি নিদর্শন। আমাদের দেশে রকমারি সংযোজনে খিচুড়ি খাওয়া হয়। তার মধ্যে ইলিশ খিচুড়ি একটি।

আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দিলেই আমাদের বাঙ্গালীদের রান্নাঘড়ে শুরু হয়ে যায় খিচুড়ি রান্নার তোড়জোর। এ যেন সেই আদিকাল থেকেই বাঙ্গালির রসনার এক অন্যতম আকর্ষণ।

আজ আমরা জানবো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবহী স্টাইলে ইলিশ খিচুড়ি রান্নার রেসিপি।

ইলিশ খিচুড়ির বৈশিষ্ট্য হলো এই খিচুড়িতে ইলিশ মাছের স্বাদ এবং গন্ধ এতটাই অটুট থাকে যে এটা বারবার আমাদের ইলিশ মাছের অতুলনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়।

আর এই স্বাদ এবং গন্ধের এক অনন্য সংমিশ্রণ পাওয়া যায় শুধুমাত্র গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী আঙ্গিকে রাধা ইলিশ খিচুড়িতে। যা অন্য কোন ভাবে রানলে পাওয়া যায় না।

আসুন এবার জেনে নিই কিভাবে বাসায় রান্না করবেন পুরোনো ধাঁচের ইলিশ খিচুড়ি-

উপকরণ:

পোলাও চাল (চিনিগুঁড়া অথবা বাসমতি)-    ৩কাপ

মুগডাল      সোয়া ১ কাপ

ইলিশ মাছ

সরিষা বাটা বা কাসুন্দি-    ৪ টেবিল চামচ।

কাঁচামরিচ

শুকনো মরিচের গুঁড়া

হুলুদ

লবণ

পেয়াজ কুচি

সরিষার তেল

প্রস্তুত প্রণালী:

একটি পাত্রে ৩ কাপ পরিমাণ পোলাও চাল নিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের সাধারণ চিনিগুঁড়া চাল ব্যবহার করতে পারেন আবার চাইলে বাসমতি চালও ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডাল প্রস্তুত:

খিচুড়ি রান্নায় ডাল একটি অপরিহার্য উপাদান। বিশষত মুগের ডাল ব্যবহার করা হয়। তবে চাইলে এর সঙ্গে মশুর ডালও দেওয়া যায়।

তবে প্রথমেই মুগের অল্প ভেজে নিতে হবে। চুলায় কড়াই বসিয়ে তাতে মুগের ডাল দিতে হবে।

ডালগুলো খুবই সামাণ্য পরিমাণে ভাজতে হবে যাতে এগুলো পুড়ে না যায়।

একদম কম আঁচে চুলার জ্বাল রেখে ৪-৫ মিনিট হালকা ভেজে নিতে হবে।

ডালের রঙ হালকা বাদামী আকার ধারণ করলে সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পাত্র থেকে নামিয়ে নিতে হবে। তানাহলে ভাজার পরেও ডাল ঐ পাত্রেই রেখে দিলে পাত্রের তাপে ডালের রঙ আরও পাল্টে যাবে। এবং পুড়েও যেতে পারে।

এবার ভাজা ডাল আর চাল একসঙ্গে নিয়ে তাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে আধা ঘন্টা সময় ভিজিয়ে রাখতে হবে।

এরফলে রান্নার পরে খিচুড়ির চাল অনেক ঝড়ঝড়ে হবে। এবং ভিজিয়ে রাখার কারণে ডালও তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হবে।

আধা ঘন্টা পর চাল-ডাল পানি থেকে তুলে আলতো হাতে কচলে কয়েক বার পানি বদলে ধুয়ে নিতে হবে।

এরপর চাল আর ডাল একটি ঝাঁজরি বা ঝুড়িতে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এতে চাল-ডাল থেকে বাড়তি পানি ঝড়ে যাবে।

ইলিশ খিচুড়ির জন্য মাছ প্রস্তুত:

গ্রাম বাংলারে ঐতিহ্যবাহী ইলিশ খিচুড়ি রান্নায় ইলিশ মাছ ভেজে রান্না হয় না। বেশ কিছুক্ষণ মেরিনেট করে তারপর রাঁধা হয়। তহলেই এর অটুট স্বাদ আর গন্ধটি পাওয়া যায়।

আর যেহেতু মেরিনেট করে রান্না করা হয়, এক্ষেত্রে একটা জিনিস অবশ্যই মনে রাখতে হবে- মাছটা বেশি পাতলা করে না কাটাই ভাল। তাহলে ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ইলিশ মাছ মেরিনেটের জন্য সরিষার সাথে সামান্য লবণ, কাঁচামরিচ দিয়ে বেটে বা পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তাহলে সরিষার তেতোভাব চলে যাবে।

এই পেস্টটি ১০-১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে।

তারপর পেস্টটির সাথে লাল মরিচের গুঁড়া, হলুদ এবং লবণ আর ২টেবিল চামচ পরিমাণ তেল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে।

এবার ইলিশ মাছের টুকরায় ভাল করে সরিষা বাটা মাখিয়ে নিতে হবে। এবং ১০/১৫ মিনিটের জন্য মাছগুলো রেখে দিতে হবে।

ইলিশ খিচুড়ি রান্না:

ইলিশ খিচুড়ি রান্নার জন্য প্রথমে চুলায় পাত্র দিয়ে তাতে আধা কাপ পরিমাণ সরিষা তেল দিতে হবে। এই খিচুড়ি রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করাটাই ভাল। এতে খিচুড়ির আসল স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যায়।

তেল সামান্য গরম হয়ে আসলে তাতে পেয়াজ কুচি দিয়ে অল্প ভাজতে হবে। এবং পরিমাণ মত হলুদ গুঁড়া দিতে হবে। তাহলে খিচুড়ির রঙ সুন্দর হবে।

মসলাটা পুড়ে যাবার আগেই ঝাঁজরিতে থাকা চাল-ডালগুলো দিয়ে দিতে হবে। তারপর ৪/৫ টা চেঁরা কাঁচামরিচ দিয়ে চাল-ডালগুলো ভালো করে ভেজে নিতে হবে।

১০-১২ মিনিট মধ্যম আঁচে চাল-ডালগুলোকে ভাজতে হবে।

এবার সিদ্ধ হওয়ার জন্য চাল-ডালে সোয়া ৭ কাপ পরিমাণ ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে দিতে হবে।

খিচুড়ি রান্নার ক্ষেত্রে পানি খুবেই সর্তকতার সাথে দিতে হয়। কারণ একটু বেশি হলেই খিচুড়ি আর ঝড়ঝড়ে হবে না। আবার একটু কম হলে চাল-ডাল ফুটবে না। তাই নিয়ম অনুযায়ী যতটুকু পরিমাণ চাল-ডাল আপনি রান্নায় ব্যবহার করবেন তার দ্বিগুণ পরিমান পানি দিতে হবে। তাহলে খিচুড়ি রান্নায় আর কোন তারতম্য হবে না।

এক্ষেত্রে আমরা ৩ কাপ পরিমাণ চাল এবং সোয়া এক কাপ পরিমাণ ডালের জন্য হিসাবমত সোয়া ৭ কাপ পরিমাণ পানি ব্যবহার করছি।

এরপর কড়াইয়ে মেরিনেট করে রাখা মাছের বেঁচে যাওয়া মসলাগুলো দিয়ে দিতে হবে। তার আগে অবশ্যই মাছগুলো তুলে নিতে হবে। মসলায় থাকা মাছের ফ্লেভার ইলিশ খিচুড়িতে ছড়িয়ে যাবে। আর এটাই ইলিশ খিচুড়ির সবচেয়ে উপভোগ্য একটি স্বাদ এবং গন্ধ।

এবার একটু লবণ দিয়ে ঢাকনা দিয়ে চুলায় মধ্যম আঁচে রেখে অপেক্ষা করতে হবে ৬-৭ মিনিট।

এরপর খিচুড়ির অবস্থা যখন হালকা ভেজা ভেজা থাকবে এবং চাল-ডালগুলো সম্পূর্ণ ফুটে যাবে না সেই মুহুর্তে অর্ধেক খিচুড়ি কড়াই থেকে নিয়ে নিতে হবে।

আরো পড়ুন:
ডাব চিংড়ি রেসিপি তৈরির পদ্ধতি 
বিয়ে বাড়ির মত সুস্বাদু-সুঘ্রাণে ভরা ঝড়ঝড়ে জর্দা পোলাও 
ফ্যাক্টরিতে কীভাবে বিভিন্ন মসলা প্রকৃয়াজাত করা হয়?

আর এই কাজটি অত্যন্ত দ্রুত করতে হবে। তানাহলে খিচুড়ির পানি শুকিয়ে যাবে। এবং পারফেক্ট ইলিশ খিচুড়ি হবে না।

কাজের সুবিধার্তে এই সময় চুলাটি বন্ধও রাখতে পারেন।

তারপর কড়াইয়ে থাকা বাকি খিচুড়িতে মেরিনেট করে রাখা ইলিশ মাছগুলো একটা একটা করে চার দিকে ছড়িয়ে রেখে দিতে হবে।

এবার কয়েকটি লেবু পাতা এবং পেয়াজ বেরেস্তা দিয়ে দিতে হবে। এতেকরে খিচুড়িতে যেমন একটি সুন্দর ঘ্রাণ পাওয়া যাবে সেই সাথে পাওয়া যাবে অতুলনীয় স্বাদ।

তারপর তুলে রাখা বাকি খিচুড়ি আবার এর উপর সুন্দর করে বিছিয়ে দিয়ে মাছগুলো ঢেকে দিতে হবে।

তারপর কয়েকেটি গোটা কাচামরিচ দিয়ে অল্প আরেকটু সরিষার তেল দিয়ে খিচুড়িতে ঢাকনা দিয়ে দমে রান্না করতে হবে ২০ মিনিট। তবে চুলার আঁচ একদম কম অর্থ্যাৎ লো হিটে রাখতে হবে।

২০ মিনিট পর খিচুড়ি তৈরি। তবে সাথে সাথে খিচুড়ির ঢাকনা না খুলে আরও ১০ মিনিট দমে রেখে দিতে হবে। তাহলে খিচুড়িতে খুব সুন্দর ঘ্রাণ এবং স্বাদ আসবে।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন